ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ-বাক্সের পরামর্শ হাইকোর্টের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৯
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ-বাক্সের পরামর্শ হাইকোর্টের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও অশালীন আচরণ,নির্যাতনসহ অত্যাচার (বুলিং) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বাক্স রাখার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১০ জুলাই) এ পরামর্শ দেন।

বুলিং প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারের করা খসড়া নীতিমালায় এই ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।

এই অভিযোগ বাক্স স্থাপন ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ জমা দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক প্রচারণার কথা বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে এই নীতিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে অগ্রগতি ২২ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

আদালতের এই পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে বলা হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনা আদালতের নজরে আনা আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা  এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা নজরে আসার পর হাইকোর্ট গত বছরের ৪ ডিসেম্বর স্বপ্রণোদিত হয়ে বুলিং প্রতিরোধের উপায় নির্ণয় করে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে নির্দেশ দেন। আদালত অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।  

রুলে অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনার মতো এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয় করে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় সরকার গঠিত কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা করে সম্প্রতি হাইকোর্টে দাখিল করে।
এই নীতিমালার ওপর শুনানিকালে বুধবার আদালত অভিযোগ বাক্স বসানোর পরামর্শ দেন।

আদালত বলেন, অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষার্থী তার অভিযোগ অভিভাবক বা শিক্ষকের কাছে বলতে চান না লাজ-লজ্জার ভয়ে। এ কারণে সে যাতে নিঃসঙ্কচে তার অভিযোগ লিখিতভাবে জানাতে পারে সেজন্যই অভিযোগ বাক্স রাখার বিধান করতে হবে। এই অভিযোগগুলো খুলে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া বা তদন্ত করার জন্য ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনা পর্ষদের হাতে দিতে বলা হয়েছে।  
আর শিক্ষক বা ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কাউকে প্রধান করে একটি কমিটির বিধান নীতিমালায় রাখা যায় কি-না সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।   
খসড়া নীতিমালায় বুলিং-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বিদ্যালয় চলাকালীন সময় বা বিদ্যালয় শুরু হওয়ার আগে বা পরে, শ্রেণীকক্ষে বা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বা বাইরে কোনো শিক্ষার্থী কর্তৃক (এককভাবে বা দলগতভাবে) অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে আঘাত করা, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা, অশালীন বা অপমানজনক নামে ডাকা, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা, কোনো বিশেষ শব্দ বারবার ব্যবহার করে উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করাকে স্কুল বুলিং হিসেবে গণ্য হবে।

নীতিমালায় তিন ধরনের বুলিংয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত, চড়-থাপ্পড় দেওয়া, লাথি ও ধাক্কা মারা, থুথু নিক্ষেপ, জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ শারীরিক বুলিংয়ের পর্যায়ে পড়বে।  
উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন ও অশালীন শব্দ ব্যবহার ও হুমকি মৌখিক বুলিং হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ ছাড়া, সামাজিক স্ট্যাটাস, ধর্মীয় পরিচিতি বা বংশগত অহংবোধ থেকে কোনো শিক্ষার্থীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন, কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো এবং প্রকাশ্যে অপমান করা হলে তা সামাজিক বুলিং হিসেবে গণ্য হবে।

নীতিমালায় এক শিক্ষার্থী কর্তৃক আরেক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করা এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ রোধে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারের বিধান রাখা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি/বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায়ই স্কুল বুলিং (শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা/ ভয় দেখানো) এর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। এতে শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়, পরিবেশ বিনষ্ট হয় বিদ্যালয়ের। যদিও স্কুল বুলিং সাধারণত ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না।  

তবে সেরকম কিছু ঘটতে পারে বলে মনে হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পূর্ব থেকে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দল/উপদলের সৃষ্টি হয়। বুলিং ও ভিকটিম উভয়কে অত্যন্ত যত্নসহকারে কাউন্সেলিং করতে হবে। যাতে তাদের আচরণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।

বুলিং প্রতিরোধে বুলিংকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিলে অভিভাবকরা বিরোধিতা না করে সহযোগিতা করবে। সন্তানকে স্কুলের নিয়মকানুন মেনে চলা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।  

এ ছাড়া, বুলিংয়ের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, সচেতনতা সৃষ্টিতে নাটক মঞ্চস্থ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত, স্কুলে আইসিটি ডিভাইস আনা নিষিদ্ধ করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।