ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

গ্রাম আদালত নিয়ে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
গ্রাম আদালত নিয়ে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে আলোচনা সভায় বক্তারা

ঢাকা: বাংলাদেশের মূলধারার বিচারব্যবস্থায় অগুনতি মামলা বিচারাধীন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণ বিচার পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। উচ্চ আদালতে মামলার চাপ কমাতে একইসঙ্গে জনগণের কাছে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার সুযোগ পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সেমিনারের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদেরের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে তিরিঙ্ক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি।  

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক সরদার এম আসাদুজ্জামান।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম আদালতে জনগণ যেন হয়রানি না হয় এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে কি কি সমস্যা আছে এগুলো নির্ধারণ করে সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে। মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি করতে হবে। মানুষ যেন গ্রাম আদালতের উপর আস্থা আনতে পারে। এ ব্যাপারগুলো যখন পত্রিকায় ছাপানো হবে তখন জনগণ জানবে এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। ইনোভেটিভ আইডিয়ার মাধ্যমে গ্রাম আদালতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, গ্রামে অনেকগুলো বিষয় থাকে যেগুলো আমলযোগ্য অপরাধ নয়, সেগুলো সমাধানের জন্যই গ্রাম আদালত। গ্রাম আদালতে মামলা না করে শহরে এসে মামলা করলে বিচারপ্রার্থী যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি যিনি মামলা করেন তিনিও ক্ষতির শিকার হন। সেজন্যই গ্রাম আদালত তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালত কোনো রায় দিলে সেটি বাস্তবায়ন করা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব রয়েছে। তবে আদালত বাদ দিয়ে গ্রামের চেয়ারম্যান বিচার সালিশ করে এরকম একটা ট্যান্ডেন্সি চালু হয়েছে। যদি গ্রাম আদালত ভালোভাবে কাজ করে তাহলে চেয়ারম্যানরা এই সুযোগটা পাবে না বলে তিনি জানান।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালতে মিথ্যা মামলা দেওয়া কঠিন, সবাই সবাইকে চেনে। একজন বিচারপ্রার্থী গ্রাম আদালতের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া মামলার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গ্রাম আদালতের সক্রিয়তা দরকার। তাই গ্রাম আদালতের সংবাদগুলো বেশি বেশি প্রচার করা হলে মানুষের হয়রানি কম হবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবে।  

তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম আদালত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি সেভাবে কার্যকর না বলেই আজকের এ আয়োজন। একজন বিচারপ্রার্থী গ্রাম থেকে যখন শহরে আসে অর্থনৈতিকভাবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার খরচ বেড়ে যায়। তাই সুবিধাভোগীদের সরাসরি সম্পৃক্ত ঘটাতে গ্রাম আদালতে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমই মূল ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন তারা।

বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালতের যেসব ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে আমরা তুলে আনতে পারি। এক্ষেত্রে গ্রাম রিপোর্টিংয়ের সাংবাদিকদের তৈরি করতে হবে। শুধু ঘটনা নয় আদালতে ঘটনাগুলো কীভাবে হলো সেগুলো তারা তুলে ধরবেন।

বক্তারা আরো বলেন, গ্রামের সংবাদগুলো কাভার করার অনীহা আমাদের আছে। কারণ গ্রাম থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো কম আসে। কেউ কেউ কাজ না করেই শুধু আইডি কার্ড নিয়েই ঘুরে বেড়ায়। তবে গ্রাম রিপোর্টিংকে মূল্যায়ন করতে হবে, তাদেরকে গাইডলাইন দিতে হবে, তাদেরকে সম্মাননা দিতে হবে, তাহলে তারা অনেক ভালো করবে। গ্রাম রিপোর্টিংয়ে ভালো করলে গ্রাম আদালতে যে আস্থার সংকট আছে রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে তা অনেকাংশেই কেটে যাবে বলে মনে করেন বক্তারা।  

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ডেইলি সানের কনসালটিং এডিটর নাদিম কাদির, নিউজ টোয়েন্টিফোরের বার্তা সম্পাদক কামরুন্নাহার মন্টি, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক মানস ঘোষ প্রমুখ।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন পাস করে যা পরে ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়। এই আইন ইউনিয়ন পরিষদকে ছোটখাট মামলার নিষ্পত্তি ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন উপকরণ, দক্ষ জনশক্তি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব এবং আদালতের মাধ্যমে বিচারের সুযোগ পাওয়া সম্পর্কে স্থানীয় লোকের সচেতনতার অভাব, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিচারিক সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় ও ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প ১০৮০টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা কার্যকর করতে কাজ করছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরোধ নিষ্পত্তি সংশ্লিষ্ট সেবাগুলো প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।

অ্যাক্টিভিটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ নামে একটি পাইলট প্রকল্প ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করে। পাইলট প্রকল্পটি দেশের ১৪টি জেলায় ৫৭টি উপজেলায় ৩৫১টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছিল। এই পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে জানুয়ারি ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের আটটি বিভাগের ২৭টি জেলায় ১২৮টি উপজেলার ১০৮০টি ইউনিয়নে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এসএমএকে/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।