ঢাকা, শনিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ফলে কেমিক্যাল টেস্ট: প্রতিবেদনে যা বলেছে এনবিআর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
ফলে কেমিক্যাল টেস্ট: প্রতিবেদনে যা বলেছে এনবিআর ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আদালতের রায় অনুসারে দেশের বন্দরগুলোতে বিভিন্ন রাসায়নিকযুক্ত ফল আমদানি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিবেদন দাখিলের পর মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) হাইকোর্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদনের জন্য এনবিআর’কে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থল ও নৌবন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন রাসায়নিকযুক্ত (কেমিক্যাল) ফল আমদানি রোধে ২০১০ সালে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই রিট পিটিশনের আলোকে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দেশের সব স্থল ও নৌবন্দরে ছয় মাসের মধ্যে কেমিক্যাল টেস্ট ইউনিট স্থাপন ও আমদানি করা সব ফলের রাসায়নিকমুক্ততা নিশ্চিত হয়ে দেশে প্রবেশের ব্যবস্থা করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ২৬ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টে দেওয়া প্রতিবেদনে এনবিআরের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে-

যেসব কাস্টম হাউজ দিয়ে ফল আমদানি হয়:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে দেশের ছয়টি কাস্টম হাউস ও ১৪টি শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে ফল আমদানির সুযোগ রয়েছে। তবে, দেশের ছয়টি কাস্টম হাউসের মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাধ্যমে ফল আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে, চট্টগ্রামে একটি অত্যাধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার রয়েছে। আমদানি করা ফল ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত কি-না, তা ওই ল্যাবে নিশ্চিত হয়েই খালাস দেওয়া হয়। তাছাড়া, অন্য রাসায়নিক শনাক্তকরণের জন্য র‌্যামন স্পেকটোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে নূন্যতম সময়ে প্রায় ১৩ হাজার রাসায়নিক শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

ঢাকায় ল্যাবরেটরি নির্মাণের উদ্যোগ:
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা কাস্টম হাউসে কাস্টমসের নিজস্ব কোনো রাসায়নিক পরীক্ষাগার (ল্যাবরেটরি) নেই। তবে, আমদানি করা ফলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংগনিরোধ অফিসের মাধ্যমে যথাযথ পরীক্ষা শেষে খালাস দেওয়া হয়ে থাকে। একই সঙ্গে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় ঢাকায় একটি কাস্টমস ল্যাবরেটরি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনার (ডিপিপি) কাজ চলমান। কাস্টমস ল্যাবরেটরির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দপ্রাপ্তির লক্ষ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইসিডি কমলাপুরের কাস্টম হাউস ও পানগাঁও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ফল আমদানি হয় না। তবে, ভবিষ্যতে ফল আমদানির কথা মাথায় রেখে এ দু’টি  কাস্টম হাউসের জন্য কেন্দ্রীয় কাস্টমস ল্যাবরেটরি ব্যবহারের সুযোগ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মোংলা ও বেনাপোল কাস্টম হাউস:
মোংলা ও বেনাপোল কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ফল আমদানি না হলেও দু’টি কাস্টম হাউসেই রাসায়নিক পরীক্ষাগার রয়েছে ও ভবিষ্যতে ফল আমদানি হলে তা পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। এ দু’টি কাস্টম হাউসেও র‌্যামন স্পেকটোমিটারের মাধ্যমে অন্য রাসায়নিকগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

১৪টি শুল্ক স্টেশন
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪টি শুল্ক স্টেশন সচল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ভোমরা, বুড়িমারি, হিলি, বাংলাবন্ধা, সোনামসজিদ, শ্যাওলা, তামাবিল, বিবিরবাজার ও টেকনাফের মাধ্যমে ফল আমদানি হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ফরমালিন টেস্টার দ্রবণ দিয়ে আমদানি করা ফলে ফরমালিন রয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করে রাসায়নিকমুক্ততা নিশ্চিত করার পর সেগুলো খালাস দেওয়া হয়। এরমধ্যে ভোমরা, বুড়িমারি, হিলি, বাংলাবান্ধাতে সরকারি তহবিল থেকে অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা এখন বাস্তবায়নাধীন। ওই অবকাঠামোর মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া, সোনা মসজিদ, তামাবিল, বিবিরবাজারসহ সাতটি শুল্ক স্টেশনের জন্য রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ সামগ্রিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এডিবির সহযোগিতায় ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে।

প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে আমদানি করা ফলসহ অন্য পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন করবে। তবে, বর্তমানেও আমদানি করা ফল নূন্যতম রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া দেশে প্রবেশের সুযোগ নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
ইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।