মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইএর তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানাকে জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
সোনাগাজীর মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ বিষয়ে নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।
এর আগে সোমবার (১১ নভেম্বর) তদন্তকারী কর্মকর্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আলামত জব্দ করাসহ তদন্ত সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ আদালতে তুলে ধরেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ তাকে জেরা শুরু করেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা জেরার পর অসমাপ্ত জেরার জন্য মঙ্গলবার পরবর্তী দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। আজ সেই অসমাপ্ত জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
এই মামলায় নুসরাতের মা, ভাই ও দুই বান্ধবীসহ ১১ জন এর আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় ও তার জবানবন্দি ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চলতি বছর ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওইদিনই আদালত এ মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার পক্ষে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। একইদিনে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
গত ১৭ জুলাই আদালত আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজ-উদ দৌলাকে পরে গ্রেফতার করা হয়। তবে অভিযোগ দেওয়ার সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্নের পাশাপাশি তার বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় ভিডিওতে দু’জন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগমুহূর্তে বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে সেই মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
ওইদিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
হত্যা মামলায় এরই মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ফেনীর একটি আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
কেআই/এএ