ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৩ দশক পর সগিরা হত্যার স্বীকারোক্তি চিকিৎসক দম্পতির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
৩ দশক পর সগিরা হত্যার স্বীকারোক্তি চিকিৎসক দম্পতির

ঢাকা: তিন দশক আগের চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যার ঘটনায় করা মামলায় নিহতের ভাসুর ডা. হাসান এবং তার স্ত্রী শাহীন চৌধুরী হত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় তারা জবানবন্দি দেন। এরপর তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে জানা যায়, ডা. হাসান এর আগে বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। দেশে আসার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে।  

মামলাটিতে অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে করা ২৮ বছর আগের আবেদন চলতি বছরের ২৬ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটির অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তদন্ত শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।

হাইকোর্টে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ।

মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ‘২৮টা বছরে এ মামলার ভিকটিমকে আমারা কী দিতে পারলাম! সামগ্রিকভাবে এটা আমাদের ব্যর্থতা। ’

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সগিরা মোর্শেদ সালাম ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যান। বিকেল ৫টায় সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় নিজেকে বাঁচাতে দৌঁড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।

এ ঘটনায় ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দু’জনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাতকারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় সাতজন সাক্ষীর। সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরের বছরের ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ন‌ভেম্বর ১৩, ২০১৯
কেআই/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।