ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সুপ্রিমকোর্টে বিএনপিপন্থিদের 'ন্যক্কারজনক' দিন!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
সুপ্রিমকোর্টে বিএনপিপন্থিদের 'ন্যক্কারজনক' দিন!

ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে লজ্জার, ন্যক্কারজনক একটি দিন অতিবাহিত করলেন বিএনপিপন্থিরা। হট্টগোল, হইচই, চিৎকার, রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে আদালত অঙ্গনকে করেছেন কলঙ্কিত। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছেন তারা। তবে সেটা করতে গিয়ে উল্টো দেশজুড়ে হয়েছেন তীব্র সমালোচিত। বেরিয়ে এসেছে বিএনপিপন্থিদের চিন্তা-চেতনার নগ্ন রূপ।

সময় তখন সকাল পৌনে দশটার মতো। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকাজ পরিচালনা করছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

কানায় কানায় পূর্ণ আদালতকক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের ওপর শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বললেন, আজ (বৃহস্পতিবার) রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ ভিসি বলেছেন, রিপোর্ট প্রস্তুত হয়নি। তাই সময় চাচ্ছি।

এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ডের একটি রিপোর্টতো আছে। সেটা দেখতে পারেন।

***আরও পড়ুন>>>‘বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা পেলেন কোথায়? জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, যেহেতু আমাদের মাথাব্যথা তাই আমরা জোগাড় করেছি। আমরা পুরোটাই এনেছি। আজ আদালতে দিচ্ছি। একথা বলে রিপোর্টের কপি বিচারপতিদের সরবরাহ করেন।

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এই রিপোর্টের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ওরা (মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য) কারা? আদালতের আদেশে এই মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়নি। তাই এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই মেডিক্যাল বোর্ড ভিসির নির্দেশে গঠিত হয়নি।

জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এই বোর্ড আমরা গঠন করিনি। এটা বিএসএমএমইউ করেছে। খালেদা জিয়ার যখন মৃত্যুর মতো অবস্থা তখন এই মেডিক্যাল বোর্ড করা হয়।

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, আমরা শুধুই মানবিক কারণে জামিন চাইতে এসেছি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় জামিন চাচ্ছি।

আরও পড়ুন>> খালেদার মেডিক্যাল প্রতিবেদন দিতে সময়, আইনজীবীদের হইচই

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা রিপোর্ট চেয়েছি। আগে সেই রিপোর্ট আসুক। আগামী বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) শুনবো।

প্রধান বিচারপতির এই কথার পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হইচই জুড়ে দেন। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনাদের (আপিল বিভাগ) প্রতি অনেক আশা। এ কারণে বারবার আপনাদের কাছে আসি। শুনানির দিন এগিয়ে রোববার বা সোমবার করার জন্য বারবার অনুরোধ জানাতে থাকেন।  

আরও পড়ুন>> এটা খুবই ন্যক্কারজনক: অ্যাটর্নি জেনারেল

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি আদেশ দিয়ে বলেন, কোনো বিলম্ব ছাড়াই ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। ১২ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি। দু’টি রিপোর্ট একসঙ্গে দেখতে চাই।  

এরপরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হইচই করতে থাকেন। কয়েক মিনিট ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় বিচারপতিরা সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এজলাস থেকে নেমে যান। নিয়ম অনুযায়ী বেলা ১১টায় কোর্ট বিরতিতে গিয়ে সাড়ে ১১টায় আবার বসেন।

আরও পড়ুন>> বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল অব্যাহত

আপিল বেঞ্চ এজলাস ত্যাগ করলেও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অবস্থান করে হট্টগোল করতে থাকেন।  

এর কিছুক্ষণ পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বের হয়ে যান।  

সাড়ে ১১টার দিকে বিরতির পর আদালত বসলে জয়নুল আবেদীন ডায়াসে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মাই লর্ড আগের অর্ডারটা রিভিউ করুন প্লিজ।

প্রধান বিচাপরতি বলেন, আদেশ হয়ে গেছে, এখন আর নতুন করে কিছু করা সম্ভব না। ’ একথা শুনেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হইচই করতে থাকেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন চাই।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এখন আর কিছু শুনবো না। অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এরকম অবস্থা আমার বিচারিক জীবনে দেখিনি। এটা নজিরবিহীন।

আরও পড়ুন>> তারা আইন-আদালত মানেন না: সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি

এরপরও আইনজীবীরা হইচই করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা কারো কথায় নয়, কাগজ দেখে বিচার করবো। পরিবেশ নষ্ট (সিন ক্রিয়েট) করবেন না। সব কিছুরই একটা সীমা আছে।  

এরপর বেঞ্চ কর্মকর্তা শুনানির জন্য অন্য মামলার তালিকা ধরে ডাকতে থাকেন। ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি শুনানি শুরু করেন। কিন্তু বিএনপপন্থি আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো মামলার শুনানি হবে না।  

কিন্তু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন শুনানি শুরু করেন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান জুড়ে দেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে আজমালুল হোসেন শুনানির চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের স্লোগান, হইচই, চিৎকারের কারণে তার শুনানি বাধাগ্রস্ত হয়।

এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা দাঁড়িয়ে যান। তারা একই স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় তারা টেবিল চাপড়াতে থাকেন। এভাবে আদালতের নির্ধারিত সময় সোয়া একটা পর্যন্ত চলে। সোয়া ১টায় বিচারপতিরা এজলাস থেকে নেমে যান। পরে আইনজীবীরাও বের হয়ে যান।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘খালেদা, জিয়া; জিয়া, খালেদা’ বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। আদালতকক্ষে এমন রাজনৈতিক স্লোগান ও আচরণে বিস্মিত হন সবাই।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হৈচৈ ও হট্টগোলকে খুব ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, তাদের বিশৃঙ্খলার জন্য আদালত আজ এক সময় উঠে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা আদালতের কার্যক্রম ঠিকমতো চালাতে দেয়নি। এটা খুবই ন্যক্কারজনক। আমরা সবাই এটার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।