রোববার (০৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর এ নোটিশ পাঠান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে বলা হয়।
নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি রাশিদা চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন দাখিলে সময় চেয়েছিলো রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত কোনো ব্যর্থতা ছাড়াই ১১ ডিসেম্বরের (বুধবার) মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়ে শুনানি ১২ তারিখ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত মুলতবি করেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন প্রতিবেদন রোববার বা সোমবার (৮ বা ৯ ডিসেম্বর) দিতে নির্দেশনার আবেদন জানান। কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করেননি আদালত।
এর পরপরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত কক্ষে হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে বিচারকরা এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। বিরতির (১১টা থেকে সাড়ে ১১টা) পর ফের আদালত বসলে জয়নুল আবেদীন শুনানি করতে চান। কিন্তু আদালত তাতে সায় দেননি। এর মধ্যে হট্টগোলের কারণে অন্য মামলার শুনানিও ব্যাহত হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি ২/১ জন সিনিয়র আইনজীবী আদালত কক্ষ থেকে বের হতে চাইলে জুনিয়রদের বাধার মুখে পড়েন। এজলাস কক্ষে তারা খালেদা জিয়ার জামিনের পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
পরে আপিল বিভাগের বিচার কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা সোয়া ১টার দিকে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ। পরে আইনজীবীরাও বের হয়ে যান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
গত ২৫ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এর আগে ১৭ নভেম্বর (রোববার) এ আবেদন উপস্থাপনের পর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান শুনানির জন্য ২৫ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই অনুসারে ১৮ নভেম্বর (সোমবার) আবেদনটি কার্যতালিকায় আসে।
গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়।
এদিকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে ওই সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়।
পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে জামিনের আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫’র বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সদ্যপ্রয়াত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।
পরে গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।
এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফের জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
ইএস/জেডএস