মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) জনস্বার্থে দুটি সংগঠনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব, বাণিজ্য সচিব, অর্থ বিভাগের সচিবসহ ৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন- আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পরে আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১ ডিসেম্বর ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে’। এটি সংবিধানে উল্লিখিত নারী-পুরুষ সমতার লঙ্ঘন। সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। (২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
‘২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না। ’ এ জন্য রিট করা হয়। এরপর আদালত রুল জারি করেছেন বলে জানান আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।
আদালতে আবেদনটি দায়ের করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও নারীপক্ষ।
আবেদনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে নারীর ঠিকানার শর্তের সমালোচনা’ শীর্ষক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিত নারীদের স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহারে নির্দেশনা থাকায় তা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদে নিয়োগের আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। মহাব্যবস্থাপক নূর-উন-নাহার স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করছেন।
বিষয়টি নিয়ে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি যেমন বাস্তবসম্মত নয়, তেমনই প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ যারা চাকরি দেবে, তারা দেখবে যে প্রার্থী যোগ্য কি না? সে কি বিবাহিত, না সে অবিবাহিত, সেটি দেখার বিষয় নয়।
তিনি আরও বলেন, আর কোনো সরকারি চাকরিতে তো এরকম নিয়ম নেই। কে কী ঠিকানা দেবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। যার প্রয়োজন সে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করবে, যার প্রয়োজন সে বাবার বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করবে। এটা এভাবে বলে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। অনেকের তো শ্বশুর বাড়ির সাথে সম্পর্ক খারাপও থাকতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরকারি সার্কুলার মেনে চলতে হয়। তবে জনগণের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সে বিষয়টি আমরা দেখবো। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করবো এ বিষয়ে প্রার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
ইএস/এইচজে