ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘টাকা পাচার করে ধরাছোঁয়ার বাইরে, মগের মুল্লুক নাকি?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
‘টাকা পাচার করে ধরাছোঁয়ার বাইরে, মগের মুল্লুক নাকি?’

ঢাকা: ‘দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে কেউ, আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, মগের মল্লুক নাকি? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে।

অর্থ পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে নিয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশের সময় বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, আসার কথা বলেও তিনি (পি কে হালদার) দেশে আসেননি। সবশেষ অবস্থা হলো, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা করছি।

এ সময় আদালত পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের একটি অংশ পড়ে শোনান। আদালত বলেন, আত্মসাৎ করে টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছে কি?

জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, সেটাই তদন্ত চলছে। এখানে মানিলন্ডারিং হয়েছে। অনেক টাকাই বিদেশে পাঠিয়েছেন। সেটার তদন্ত চলছে।

আদালত বলেন, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে কেউ, আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, মগের মুল্লুক নাকি? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এত টাকা সে কীভাবে আয় করেছে, কিভাবে বিদেশে পাচার করলো?

‘আমরা মনে করি তাকে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা আমাদের জানা দরকার। ’

আদালত আরও বলেন, আমরা মনে করি— এটা তো হতে পারে না, একজন মানুষ হাজার হাজার কোটি নিয়ে যাচ্ছে, সে আইনের আওতার বাইরে থাকবে, কোর্টের আওতার বাইরে থাকবে, সমস্ত জাতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করবে, এটা হতে পারে না। তাকে ব্যাখ্যা করতে হবে কীভাবে এত টাকা বিদেশে নিলো। এ বিষয়ে অব্যশই যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।

এরপর আদালত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন।

দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে দুদক চেয়ারম্যানকে। এছাড়া পরবর্তী আদেশের জন্য ২ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন আদালত।

প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন, তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।

২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এই আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানিয়েছেন পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর দেশে ফিরছেন না।

আরও পড়ুন:
পিকে হালদারকে ফেরাতে কী পদক্ষেপ, জানতে চান হাইকোর্ট

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।