ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মারধর-ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি: বিচারিক প্রতিবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২১
মারধর-ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি: বিচারিক প্রতিবেদন

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জে সেই স্কুলছাত্রীর ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ডে) থাকাকালে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ শিকার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনার সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌসের এ প্রতিবেদন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ১৩ জানুয়ারি দিন রেখেছেন।

এর আগে ৪ জানুয়ারি বিচারিক অনুসন্ধানের প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়েছিল।

হাইকোর্টে আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা, যৌক্তিকতা ও মামলার নথি তলব চেয়ে গত ২৫ আগস্ট পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করেন।

পরে ২৭ আগস্ট শুনানি শেষে ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। মামলার নথিসহ হাজির হতে নির্দেশ দেন বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাকে। সেই অনুসারে তারা হাজির হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাখ্যা দেন। এরপর আদালত ২৪ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন।

পরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারিক অনুসন্ধানে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানের জন্য ১৯ নভেম্বর আরও একমাস সময় চান নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সেই অনুসারে সময় দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছিলেন আদালত।

মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, “...তবে পুলিশ হেফাজতে (পুলিশ রিমান্ডে) থাকাকালীন সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা মো. শামীম আল-মামুন, এসআই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা এর বিরুদ্ধে আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। ”

হাইকোর্টে আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবী হলেন— আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির ও মো. মিসবাহ উদ্দিন। গত ২৪ আগস্ট ‘ধর্ষণের পর নদীতে মরদেহ ফেলে দেওয়া স্কুলছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তনের’ খবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে শিশির মনির জানান, গত ৪ জুলাই পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। গত ৬ আগস্ট নিখোঁজ স্কুলছাত্রীর বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

স্বীকারোক্তিতে তারা বলেন, ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।

জবানবন্দি নেওয়ার পর আসামিদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু ২৩ আগস্ট ওই ছাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসামিরা কীভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সম্পর্কিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, যেখানে ওই ছাত্রী অক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছে?

আবেদনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, বাদী এবং আসামিদের বিবাদী করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।