ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সিলেটের সাবেক কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিককে পৃথক দুটি অভিযোগে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রোববার (০৯ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় দেন।
এর মধ্যে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় পাঁচ বছর, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুটি সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। তাই তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায় আরও তিন মাস কারাভোগ করতে হবে।
এদিন বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক নাজমুল আলম। দুপুর ১টা ১৩ মিনিটের সময় আট বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করার কথাও জানিয়ে দেন আদালত। এছাড়া ৬৫ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় আসামি পার্থ গোপাল বণিককে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
আসামি পক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী জানান, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এদিন ধার্য করা হয়। ওইদিন দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল ও আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী যুক্তিতর্ক শেষ করেন।
বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। গত ১৬ নভেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এরপর ২৪ নভেম্বর মামলাটিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ডিআইজি পার্থ।
গত বছরের ৫ জুন পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন। এরপর ২ সেপ্টেম্বর পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
সেই আদেশ অনুযায়ী গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে পরবর্তী বিচারের জন্য মামলাটি এ আদালতে পাঠানো হয়।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সকাল থেকে পার্থ গোপালকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকেলে তার গ্রিন রোডের বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পরে তাকে সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট একই কর্মকর্তা ডিআইজি পার্থের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। একই বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
সিলেটে দায়িত্ব পালনের আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালন করেন পার্থ গোপাল বণিক। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজনস হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে এবং চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তারপরই অভিযানে যায় কমিশন।
পরে ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্থ গোপাল বণিককে গ্রেফতারের দিন থেকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২২
কেআই/আরবি/আরআইএস