ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ফরিদপুরে জমিদার ঈশান চন্দ্রের সম্পত্তির ওপর স্থিতাবস্থা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
ফরিদপুরে জমিদার ঈশান চন্দ্রের সম্পত্তির ওপর স্থিতাবস্থা

ঢাকা: ছেলে সেজে ফরিদপুর শহরে জমিদার ঈশান চন্দ্র দাস সরকারের সম্পত্তি দখল ও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ফরিদপুরের গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলামের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রুলসহ আদেশ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি জানান, তিন মাসের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে এবং রুল জারি করে ওই সম্পত্তির ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া পরবর্তী আদেশের জন্য ১৯ এপ্রিল দিন রেখেছেন।

২০২০ সালের ২৯ জুলাই দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘ঈশানের ছেলে সেজে জমি পেতে চান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করেই রিট আবেদনটি করা হয়।

ওই প্রতিবেদেনে বলা হয়, ফরিদপুরের ঈশান চন্দ্র দাস সরকারের তিন ছেলে। প্রায় ২০ একর সম্পত্তি দখলে নিতে তার ছয় ছেলের নাম শোনা যাচ্ছে।

কয়েকশ’ কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করার পাঁয়তারা করছেন তারা। ফরিদপুর শহরের ১১৮ নম্বর মৌজার ঝিলটুলী ও আলীপুর এলাকার জমিসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার অনেক ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন তৎকালীন জমিদার এই ঈশান ও তার ভাই ইন্দু ভূষণ দাস সরকার।

ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল, ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদপুর মিউজিয়াম, সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়, জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়, পাট কর্মকর্তার কার্যালয়, সরকারি তিতুমীর বাজার, চকবাজার, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা এই সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ইশারায় একটি চক্র এই সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। যেখানে ঝিলটুলী এলাকার বেশির ভাগ জমি রয়েছে। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন ফরিদপুর নিউ মার্কেটের (তিতুমীর বাজার) ৯ জন ব্যবসায়ী। ভূমি অফিস বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

স্থানীয়রা জানায়, এস্টেটের মালিক ঈশানের তিন ছেলে—জ্যোতিশ চন্দ্র সরকার, ধীরেন্দ্রনাথ সরকার ও সুরেশ চন্দ্র সরকার। তার ভাই ইন্দু ভূষণের ছিল তিন ছেলে—সত্যভূষণ সরকার, ভক্তিভূষণ সরকার, শক্তি ভূষণ সরকার এবং স্ত্রী নীলিমা সরকার। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের দিকে তাঁরা সবাই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।

২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি আইনের পর ঈশানের উত্তরাধিকার দাবি করে সম্পত্তি অবমুক্তির আবেদন করেন জনৈক উজ্জ্বল সরকার। তারা দাবির সপক্ষে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ স্বাক্ষরিত একটি ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন। তাতে ঈশানের ছয় ছেলে উল্লেখ করা হয়। যাদের একজন ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার। এই ক্ষিতিশের নাতি উজ্জ্বল সরকার, উৎপল সরকার ও উত্তম সরকার। নামজারির সময় ওয়ারিশ সনদ নিয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সন্দেহ হলে সেটি ফের যাচাইয়ের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। এর পরই বিশাল এই ভূসম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

ঈশান গোপালপুর ইউপির চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মজনু বলেন, ‘চক্রটি ঈশানের গোমস্তা ক্ষিতীশ চন্দ্রকে সন্তান সাজিয়ে পুরো সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। ’

তিনি জানান, আরএস ও সিএস খতিয়ানের রেকর্ডপত্র, দলিল-দস্তাবেজ ও মামলার নথি ঘেঁটে দেখা গেছে সবখানেই ঈশান চন্দ্র সরকারের তিন ছেলে থাকার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। ফরিদপুর সদর মুনসেফ আদালতে ১৯৬১ সালের ১৬/৬১ নম্বর মামলায় দেখা যায়, ডিক্রিদার পক্ষ হিসেবেও রয়েছে ওই তিন ছেলের নাম। এ ছাড়া ১৯৪৪ সালের জেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে তিনটি দলিল সম্পাদন হয় সেখানেও তিন ছেলের নাম রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।