ঢাকা: প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাভারের দশম শ্রেণির ছাত্রী নীলা রায় (১৪) হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফায়জুন্নেসা অভিযোগ গঠনের এই দিন ধার্য করেন।
এদিন হাজতি আসামি মিজানুর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা সাকিব ও সেলিম পালোয়ানও এদিন আদালতে হাজির ছিলেন। সাকিবের পক্ষে আইনজীবী আরিফা আক্তার রেবা এবং সেলিমের দিল মাহফুজা পারভীন পূর্বশর্তে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিন অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও প্রস্তুতি না থাকায় রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষ চার্জ শুনানি পিছিয়ে দিতে মৌখিকভাবে আর্জি জানান। তাই বিচারক অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন।
২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নির্মল কুমার দাস আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে দণ্ডবিধির ৩০২/১০৯ ধারায় এই তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিকাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ১৮ জনকে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাভার পৌরসভার পালপাড়া এলাকায় নীলাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর মিজান ও তার বাবা-মাকে আসামি করে সাভার থানায় হত্যা মামলা করেন নীলার বাবা নারায়ণ রায়। নারায়ণ রায় ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট এলাকা থেকে মিজানুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মানিকগঞ্জের চারীগ্রাম এলাকা থেকে একইদিনে মিজানের বাবা ও মাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ওইদিন সাকিব ও জয়কে সাভারের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকার একটি ইটভাটার পাশ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মিজান।
এরপর মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান, মা নাজমুন্নাহার সিদ্দীকা এবং অপর দুই আসামি সাকিব ও সেলিম উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।
মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে নীলা সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। পৌর এলাকার কাজী মোকমা পাড়ার এক বাড়িতে তার পরিবার ভাড়া থাকতো।
ঘটনার আগে বছর দেড়েক ধরে নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন কাজি মুকমাপাড়ার পাশের এলাকা ব্যাংক কলোনির আবদুর রহমানের ছেলে কলেজছাত্র মিজান। নীলা ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তার ভাই অলক রায় তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাসা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর মিজান রিকশার গতিরোধ করেন। এরপর অস্ত্রের মুখে নীলাকে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে পালপাড়া এলাকায় নিয়ে যান তিনি। সাভার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উল্টো দিকের একটি গলির ভেতরে নিয়ে নীলার গলায়, পেটে, মুখে ও ঘারে ছুরিকাঘাত করে মিজান পালিয়ে যান।
নীলার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা রোডের প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় নীলার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, মিজান স্থানীয় একটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এর আগে একবার টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় সে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
কেআই/এমআরএ