ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে এক দশক পেরিয়ে গেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেন।
২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে একই বছর ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় একই রকম অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’জন অপরিচিত ব্যক্তি জড়িত ছিল। সাগরের হাতে বাধা চাদর এবং রুনির টি-শার্টে ওই দুই ব্যক্তির ডিএনএ’র প্রমাণ মিলেছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ল্যাব যথাক্রমে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস এবং প্যারাবন স্ন্যাপশট ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বর্তমানে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি ডিএনএ’র মাধ্যমে অপরাধীর ছবি বা অবয়ব প্রস্তুতের প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে।
র্যাবের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাব থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়াকেই তদন্তে বিলম্বের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি এএনএম ইমরান খান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ ও ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়ার কারণেই তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। অন্যান্য তদন্ত চলছে। সন্দেহভাজন কিছু আসামিও গ্রেফতার আছেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে বাকিটা এখন ডিএনএ ও ফরেনসিক রিপোর্ট প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করছে।
দীর্ঘ এ সময়েও তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির। তিনি আদালত পাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, ১০ বছর হয়ে গেল এখনো সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। মামলার তারিখ আসে আর যায়। কোনো কাজ হয় না। সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কবরের পাশে গিয়ে কি বলবো, বিচার হচ্ছে না। তবে বিচার একদিন হবেই। আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আমি সাগর-রুনি হত্যার বিচার চেয়ে যাব। দুনিয়ার বিচার না হলেও ওপরে যিনি আছেন, তিনি অবশ্যই বিচার করবেন।
তদন্তে এ বিলম্বকে অস্বাভাবিক বলছেন আইনজীবীরা। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, স্বাভাবিকভাবে অন্য মামলা তদন্তে যে সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে। একটি স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় তদন্ত সংস্থা হয়তো নিখুতভাবে প্রতিবেদন দাখিলে এ সময় নিচ্ছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে এক দশকেও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
এদিকে প্রতিবারের ন্যায় সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ)। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ডিআরইউ চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বলন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং রোববার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
কেআই/এসআই