ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পিলখানা ট্রাজেডির ১৩ বছর: বিচারের দিন গুনছে ৪৬৮ পরিবার

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
পিলখানা ট্রাজেডির ১৩ বছর: বিচারের দিন গুনছে ৪৬৮ পরিবার ফাইল ফটো

ঢাকা: পিলখানা ট্রাজেডির ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। এই ট্রাজেডির পর দীর্ঘ সময় পার হলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া।

 

হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলায় আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্য। তারা এখন দিন গুনছেন বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষ হওয়ার।

ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা মামলা বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে শেষ হয়েছে। তবে বিস্ফোরক আইনে হওয়া অপর মামলা এখনো ঝুলছে নিম্ন আদালতে। রাষ্ট্রপক্ষের এক হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২১০ জন।

ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ বকশীবাজার আলীয়া মাদরাসা ময়দানে স্থাপিত আদালতে এই মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করেন। গত এক বছরে ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ৯ ও ১০ মার্চ এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে।   
আসামিপক্ষের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরক মামলাটি শেষ করতে ধীরগতি রয়েছে। মামলাটি নিষ্পত্তিতে যথাযথ তৎপরতা নেই রাষ্ট্রপক্ষের। তাই বিচার শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন, সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে, এ বছরের মধ্যেই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানরা নারকীয় তাণ্ডব চালায় পিলখানায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। বিডিআর বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এই মামলায় হাইকোর্টের আপিলের রায়ও হয়ে যায়।

অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি রয়েছে। মামলাটি হত্যা মামলার সঙ্গে বিচার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে শুধু হত্যা মামলার সক্ষ্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি। একপর্যায়ে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত করে দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়।

এই মামলায় আসামিপক্ষের অভিযোগ মামলাটি শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ তৎপর নয়। আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয়। ২৭৮ জন আসামি এই ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় খালাস পান। এছাড়া স্বল্পমেয়াদে সাজা ভোগ করে আরও ১৯০ আসামি অপেক্ষা করছেন বিস্ফোরক মামলা নিস্পত্তির জন্য। তাই আমরা আসামিপক্ষে চাই মামলাটি দ্রুত শেষ হোক। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি শেষ করার ক্ষেত্রে সিরিয়াস নয়।

তিনি আরও বলেন, ৪৬৮ জন আসামি মূল মামলায় খালাস বা সাজাভোগ করেও মুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি জামিন নামঞ্জুরের আদেশও আমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই জামিন আবেদন নিয়ে আমরা হাইকোর্টেও যেতে পারছি না। তাই আমরা চাই হয় এসব আসামিকে জামিন দেওয়া হোক অথবা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক।

তবে আসামিপক্ষের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ ছিল। আদালত খোলার পর রাষ্ট্রপক্ষে আমরা নিয়মিত সাক্ষী হাজির করছি। অভিযোগপত্রে ১ হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষী আছেন। সবার সাক্ষী নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যারা সাক্ষ্য দিতে আসবেন তাদের জবানবন্দি নিয়েই বিচার শেষ করা হবে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যেই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
কেআই/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।