ঢাকা: ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং আল জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনের অন্যতম প্রধান চরিত্র সামিউল ওরফে জুলকারনাইন সায়ের খানসহ সাতজনের বিচার শুরু হয়েছে।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর এই আদেশ দেন।
একইসঙ্গে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
বিচার শুরু হওয়া আসামিরা হলেন— হাঙ্গেরিপ্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি), সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনীম খলিল, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, ব্লগার আশিক মোহাম্মাদ ইমরান ও মো. ওয়াহিদুন্নবী, রাষ্ট্রচিন্তার মো. দিদারুল ইসলাম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
আসামিদের মধ্যে সামিউল ইসলাম খান, তাসনীম খলিল, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান ও মো. ওয়াহিদুন্নবী মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর জামিনে ছিলেন। তবে এ দিন তিনি আদালতে হাজির হননি। আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
দিদারুল আলম ও মিনহাজ মান্নান জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন। তাদের পক্ষে আইনজীবীরা অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠনের প্রার্থনা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আদেশ দেন।
মামলার অপর আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অপরদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও ফেসবুক আইডি ফিলিপ শুমাখারকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ১০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আফছর আহমেদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এর আগে ২০২০ সালের ৫ মে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুশতাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়।
মামলার পর গ্রেফতার হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল আলম ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৫ মে মুশতাক আহমেদ কাশিমপুর কারাগারে মারা যান।
২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসীন সর্দার প্রথম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানে কার্টুনিস্ট কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ও লেখক মুশতাককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি ও মিনহাজ মান্নান, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান, তাসনীম খলিল ও মো. ওয়াহিদুন্নবীসহ ৮ জনের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছিল।
চার্জশিটে আল-জাজিরা টেলিভিশনে সরকারপ্রধান এবং সেনাপ্রধানকে নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদনে প্রধান চরিত্র হিসেবে সামিউল ইসলাম খান ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামির অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে সংবাদপত্রে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় মামলাটি পরে অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। অধিকতর তদন্ত শেষে ৭ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
কেআই/এমজেএফ