ঢাকা: নারী পুলিশ পরিদর্শককে বিয়ে করে ধর্ষণ মামলায় জামিন পেয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি মোক্তার হোসেন। সোমবার (৭ মার্চ) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি এসপি মোক্তারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেই প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে সোমবার শুনানির দিন ধার্য ছিল।
এদিন আসামিপক্ষে কাজী আমজাদ হোসেন জামিনের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষের মধ্যে আপোস হয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর মামলার বাদীর সঙ্গে আসামির বিয়ে হয়েছে। আসামি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই মানবিক বিবেচনায় জামিনের প্রার্থনা করছি।
এ সময় ওই নারী পরিদর্শকের সঙ্গে এসপি মোক্তারের বিয়ের কাবিনানামাও আদালতে দাখিল করেন তিনি।
শুনানিকালে মামলার বাদীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার আইনজীবী সালাহ উদ্দিন খান আদালতকে বলেন, আপসনামা মোতাবেক আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়েছে। তিনি এই মামলাটি চালাতে ইচ্ছুক নন। নিজে এবং অন্য সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে চান না।
শুনানি শেষে বিচারক এসপি মোক্তারের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বছর ১২ আগস্ট ওই নারী পরিদর্শক বাদী হয়ে একই আদালতে এসপি মোক্তারের নামে ধর্ষণের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তা এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন ২০১৯ সালের মে মাসে সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্টের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। বাদী আগে থেকেই সেখানে কর্মরত থাকায় মিশন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় বিভিন্ন অজুহাতে সহযোগিতার নামে আসামি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে আসামি বাদীর বাসায় গিয়ে তার ব্যবহৃত গাড়ির চাবি চান। বাদী চাবি ইউনিফর্মের পকেট থেকে আনতে গেলে আসামি পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে ধর্ষণ করেন। এরপর এ ঘটনা কাউকে না জানাতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি হুমকি-ধামকি দেন। ওই বছর ২২ ডিসেম্বর ক্ষমা চেয়ে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি মৌখিকভাবে বিবাহ করে বাদীকে আবারও ধর্ষণ করেন। এরপরও আরও কয়েকদফা বাদীকে ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন।
এরপর নিকাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে বাদীকে গ্রহণ করার তাগিদ দিলে মোক্তার হোসেন তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। বাদীকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। এ অবস্থায় ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল বাদী মোক্তার হোসেনের রাজারবাগ বাসায় গিয়ে আশ্বাস অনুযায়ী বিয়ের কাবিননামা সম্পন্নের তাগিদ দেন। এতে মোক্তার হোসেন অস্বীকৃতি জানান।
মোক্তার হোসেন, তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে বাদীকে মারধর করেন এবং হুমকি ধামকি দেন। এরপর ২০২১ সালের ১০ আগস্ট বাদী উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ না করে আদালতে মামলার করার জন্য বলেন। তাই তিনি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ৭ মার্চ, ২০২২
কেআই/এমএমজেড