ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দায়সারা প্রতিবেদন: তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতের ভর্ৎসনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
দায়সারা প্রতিবেদন: তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতের ভর্ৎসনা

ঢাকা: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করায় তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ মামলার রায় দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, পূর্ণ তদন্ত না করে মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা আলবানী, নোমান ও হিরণ ওরফে কামালকে এ মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া কোনো প্রকার সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই আসামি চান মিয়া, ওমর ফারুক, ওরফে মানিক, হাফেজ আহসানউল্লাহ মাহমুদ এবং শাহজালাল মিয়াকে অত্র মামলায় আসামি হিসেবে সোপর্দ করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ। এর মাধ্যমে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন এবং চরমভাবে দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। এর ফলে হোসাইনি দালান ইমাম বাড়ায় গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী নির্দেশদাতা ও হামলাকারী আইনের আওতার বাহিরে রয়েছে। তদন্তে অবহেলা ও তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা রায়ে বলা হয়নি।

এ মামলার মোট ১০ জন আসামির মধ্যে মাসুদ রানা ওরফে সুমন এবং জাহিদ হাসান রানা ওরফে মুসায়াব শিশু বিধায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের মাধ্যমে তাদের বিচারের জন্য শিশু আদালতে সোপর্দ করা হয়।

অপর আট আসামি মধ্যে কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আসিফ এবং আরমান ওরফে মনির ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ও আরমান ওরফে মনিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আরমান মূল হোতা হিরন ও রানাকে তার বাসায় ঘুমাতে দেন এবং কবির বোমা হামলা করার জন্য মিটিং করেন ও ঘটনাস্থল রেকি করেন। কিন্তু তারা এ হামলা করেছে মর্মে স্বীকার করেননি এবং তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া কোনো সাক্ষীও এ মর্মে কোনো জবানবন্দি দেয়নি।

তাই প্রসিকিউশন পক্ষ শুধুমাত্র আসামি কবির হোসেন ওরফে রাশেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর ১০ ধারায় অপরাধ এবং আসামি মো. আরমান ওরফে মনিরের বিরুদ্ধে একই আইনের ১২ ধারায় অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছে। তাই আসামি কবির হোসেনকে এই আইনের ১০ ধারা অনুসারে সাত বছর কারাদণ্ড, আসামি আরমানকে এই আইনের ১২ ধারায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া উভয়কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  

দুই আসামি আবু সাঈদ ও রুবেল ওরফে সজিবের নামসহ-আসামির স্বীকারোক্তিতে এলেও খালাস দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারক বলেন, আসামি আবু সাঈদ অন্যদের সঙ্গে মিটিং করেন এবং ঘটনাস্থল রেকি করেন। কিন্তু স্বীকারোক্তিতে অপর আসামি আরমান তার নাম বলেননি। পরীক্ষিত কোনো সাক্ষীও বলেনি যে, আসামি আবু সাঈদ হোসাইনি দালান ইমাম বাড়ায় গ্রেনেড হামলায় জড়িত। তার কাছ থেকে কোনো আলামত উদ্ধার হয়নি। শুধুমাত্র আসামির জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই নিরাপদ নয় যে, আসামি আবু সাঈদ হোসাইনি দালান ইমাম বাড়ায় গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কোনোভাবেই প্রমাণিত হয়নি।

অপর আসামি সজিব বোমা হামলার জন্য দায়ী বা ঘটনাস্থল রেকি করেছেন। পরবর্তীতে বিচারের সময় কোনো সাক্ষীও তা উল্লেখ করেননি। রুবেল ইসলামের অপর নাম যে সজিব, কোনো সাক্ষী তা বলেননি এবং তদন্ত কর্মকর্তা অন্যভাবেও তা প্রমাণ করতে পারেননি। তাই প্রসিকিউশন রুবেল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে সজিব এর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে প্রসিকিউশন পক্ষ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, কবির হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিলেন আলবানী ও নোমান। আরমান ওরফে মনিরের স্বীকারোক্তিতে দেখা যায়, হামলার মূল হোতা রানা ওরফে মুসোয়েব ওরফে হিরন। স্বীকারোক্তিতে নাম আসলেও তাদের চার্জশিটভুক্ত না করায় তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেন আদালত।

এছাড়া খালাসপ্রাপ্ত চার আসামি চান মিয়া, ওমর ফারুক, ওরফে মানিক, হাফেজ আহসানউল্লাহ মাহমুদ ও শাহজালাল মিয়াকে কোনো কারণ ছাড়াই চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামি কবির হোসেন ও আরমান ওরফে মনির তাদের জবানবন্দিতে হোসাইনি দালান ইমাম বাড়ায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আসামি চান মিয়া, ওমর ফারুক ওরফে মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ এবং শাহজালাল মিয়া জড়িত মর্মে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। কোনো সাক্ষীও তাদের জবানবন্দিতে তাদের নাম উল্লেখ করেননি। তাদের কাছ থেকে কোনো আলামতও উদ্ধার হয়নি।

এ চার আসামি হোসাইনি দালান ইমাম বাড়ায় বিস্ফোরণে জড়িত মর্মে কোনো সাক্ষী  উপস্থাপনে প্রসিকিউশন পক্ষ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ আসামিরা কীভাবে এই গ্রেনেড হামলায় জড়িত তার ব্যাখ্যা তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি। শুধুমাত্র আসামির সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই অযথাই তদন্তকারী কর্মকর্তা এই চার আসামিকে এই মামলায় বিচারের জন্য সোপর্দ করা হয়েছে। কাজেই ওই আসামিদের বিরুদ্ধে হোসাইনি দালানে গ্রেনেড হামলার বিস্ফোরণে অংশ নিয়েছে বা সাহায্য করেছেন সে অভিযোগ প্রমাণ করতে প্রসিকিউশন পক্ষ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

কোনো সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই চান মিয়া, ওমর ফারুক, ওরফে মানিক, হাফেজ আহসানউল্লাহ মাহমুদ এবং শাহজালাল মিয়াকে অত্র মামলায় আসামি করায় অর্থাৎ তদন্ত কর্মকর্তা এর খামখেয়ালীর কারণে চার আসামি হয়রানির শিকার হয়েছে এবং তারা শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছে।

আসামি কবির হোসেন, আবু সাঈদ, আরমান, রুবেল, চান মিয়া, ওমর ফারুক, হাফেজ আহসান উল্লাহ ও শাহজালাল মিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ এর (২)(ক)(খ)(গ)(ঘ)(ঙ) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই ছয় আসামির বিরুদ্ধে এসব ধারার অভিযোগ প্রসিকিউশন পক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি বিধায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
কেআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।