ঢাকা: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা বা তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে যেন অপব্যবহার না হয় সেজন্য পাবলিক প্রসিকিউটরদের (পিপি) সচেতন থাকতে হবে৷ এক্ষেত্রে মামলা গ্রহণের মতো প্রাথমিক উপাদান না থাকলে আপনারা আদালতকে সেই মতামত দেবেন। এছাড়া যেখানে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টের (গ্রেফতারি পরোয়ানা) পরিবর্তে সমন দেওয়াই যথেষ্ট সেখানে পাবলিক প্রসিকিউটররা তাদের সুচিন্তিত মতামত দেবেন।
শনিবার (২১ মে) দুপুরে মামলাজট নিরসনে রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার এতে সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী বলেন, আগে যে অপরাধ হতো শারীরিকভাবে, এখন সেটা হয় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই অপরাধের বিচার করতে তো আইন লাগবে। তবে কারো প্রতি যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সেজন্য আমরা আগে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি৷
দেশের মামলা জট নিরসনে আইন কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, মামলা জট শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। যদিও ভারতে এই সংখ্যা ৪ কোটি ৮০ লাখ। জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের দেশে মামলা সংখ্যা কম। তবুও এটাও কাঙ্ক্ষিত নয়।
তিনি বলেন, মামলা জট নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব মামলা আপসযোগ্য সেগুলো মীমাংসার জন্য আইন কর্মকর্তাদেরও ভূমিকা আছে। আপনারা দুই পক্ষকে আপস করতে উৎসাহিত করবেন। ছোট ছোট মামলা আদালতের বাইরে আপস হয়ে গেলে মামলার সংখ্যাও কমে যাবে। মামলায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক সময় হত্যা মামলাতেও বাদী ও আসামিরা আপস হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাদীপক্ষ মনে করছেন বিচার বিলম্বের কারণে তারা ন্যায়বিচার পাবেন না।
দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে দেওয়ানী কার্যবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতেও কাজ চলছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো পক্ষ অযথা সময় চাইলে তাকে বড় অঙ্কের খরচ দিতে হবে।
রেকর্ড সংশোধনের মামলায় ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রইব্যুনাল গঠন এবং চেকের মামলা দায়রা আদালতের পরিবর্তে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিষ্পত্তি করতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
আলোচনাসভায় মামলাজট নিরসনে দেশের ৮ বিভাগ থেকে ১৬ আইন কর্মকর্তাকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।
কয়েকজন কর্মকর্তা মামলাজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দরখাস্ত দিয়ে সময় ক্ষেপণ না করা, সাক্ষীদের সঠিক সময়ে হাজির করা, বিচারক সংখ্যা বাড়ানো, দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫১ ও তামাদি আইনের ৫ ধারার প্রয়োগ সীমাবদ্ধ করা, আইন কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, সরকারি আইন কর্মকর্তাদের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রদান ইত্যাদি পরামর্শ দেন তারা।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দীন, ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুসহ সারাদেশের পিপি ও জিপিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
কেআই/এমএমজেড