ঢাকা: রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় তদন্ত কার্যক্রমে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া অভিযোগপত্র বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আটজনকে আসামি করে নুরুল ইসলামের মেয়ের দায়ের করা এজাহার আমলে নিয়ে এ মামলায় নতুন করে তদন্তে একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২২ মে) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আবুবকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
পরে আইনজীবী মো. আবুবকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মো. শামীম আক্তারের তদন্ত ও চার্জশিটটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে রায় দিয়েছেন আদালত। আসামিদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে আদালত আদেশ দিয়েছেন। এজন্য চার্জশিটটি বাতিল করে দিয়েছেন। এছাড়া আদালত ওই তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর দায়ের করা নামসহ এজাহার গ্রহণ করে নতুন করে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে নুরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এদিনই তার মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসিকে একটি অভিযোগ দেন।
সেই অভিযোগে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুঠিয়ার ওসির অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ কারণে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ অভিযোগটি রেকর্ড না করে নিগার সুলতানাকে তা সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। তখন অভিযোগটি গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার সই নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরে নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা থেকে অভিযোগ ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি সংগ্রহ করে দেখেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের নাম-ঠিকানা লেখার কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লেখা রয়েছে।
আবার তার উল্লেখ করা আটজন আসামির পরিবর্তে সেখানে ছয়জনের নাম রয়েছে। অথচ তিনি পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ আটজনকে আসামি করেছিলেন। নিগার সুলতানা এই বিতর্কিত অভিযোগের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘এজাহার বদলে দিলেন ওসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে রিট করেন নিগার সুলতানা।
নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার ওই রিটের পর একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের অভিযোগ বদলে দেওয়ার ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুলও জারি করেন।
ওই আদেশের পর রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনা তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন।
প্রতিবেদনে এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় ওসি সাকিল উদ্দিনসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা দায় এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর পুঠিয়া উপজেলার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা/সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআই এর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
ওই আদেশ অনুসারে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এরমধ্যে ওই মামলার সন্দেহভাজন এক আসামি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
তখন হাইকোর্ট দেখতে পান, আদালতের দেওয়া নির্দেশনা না মেনে তদন্ত করেছেন পিবিআই কর্মকর্তা।
এরপর গতবছর মার্চে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারির পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। এ বছর জানুয়ারিতে তদন্ত কর্মকর্তা শামীম তলবে হাজির হলে তার ব্যাখ্যা শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন>>
>>> হাইকোর্টের আদেশের পর শ্রমিক নেতা নূরুল হত্যার তদন্তে পিবিআই
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
ইএস/আরআইএস