ঢাকা: ঈদ উদযাপন করতে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় সদরঘাটে লঞ্চ ও পন্টুনের চাপ খেয়ে বাম পা হারানো কবির হোসেনকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ও পূবালী-১২ লঞ্চের মালিক আলী আজগর খালাসীসহ মোট ৮ জন বরাবরে রোববার এ নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো.তানভীর আহমেদ।
এ নোটিশ পাওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে জবাব দাখিল করতে, ভিকটিমের চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ লাখ টাকা প্রদান এবং তার মানসিক ও শরীরিক ক্ষতির জন্য অবশিষ্ট ৯৫ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১৮ মে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘এই সংসার চলবে কী করে: লঞ্চের ধাক্কায় পা হারানো কবিরের স্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ সংযুক্ত করে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
প্রথম আলোর সংবাদে বলা হয়, রাজধানীর নবাবপুরে বৈদ্যুতিক পাখার দোকানে দিনমজুরের কাজ করতেন কবির হোসেন (২৮)। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সদরঘাটে লঞ্চের ধাক্কায় গুরুতর আহত হলেন এই যুবক। কেটে ফেলতে হলো বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ। পুরো পরিবারের জন্য ঈদ উদযাপন পরিণত হলো চরম বিষাদে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চিকিৎসাধীন কবিরের এখন একমাত্র চিন্তা কীভাবে চলবে সংসার, একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ দেখবে কে?
ঈদুল ফিতরের এক দিন আগে ১ মে সকালে স্ত্রী, মেয়েকে ও তিন বোনকে নিয়ে সদরঘাটে আসেন কবির হোসেন। ঘাটে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চ থাকলেও সেটি কানায় কানায় ভরা থাকায় স্বজনদের নিয়ে লঞ্চে উঠতে পারেননি তিনি। অপেক্ষার পর পূবালী-১২ লঞ্চটি ঘাটে ভিড়তে শুরু করে। বেশি গতি থাকায় এটি পন্টুনে এসে জোরে ধাক্কা দেয়। অন্যদিকে যাত্রীর প্রচণ্ড চাপ পন্টুনে। এ সময় লঞ্চ ও পন্টুনের মাঝে চাপ খেয়ে কবির হোসেনের বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে প্রায় আলাদা হয়ে যায়। আর শাহজালাল নামে আরেক ব্যক্তির ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙে যায়। পরে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কবির বলেন, ‘দুর্ঘটনায় জড়িত লঞ্চটির মালিক ম্যানেজারের মাধ্যমে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। নিজে হাসপাতালে আসেননি। এছাড়া আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কোনো আর্থিক সহযোগিতা করা হয়নি। ’
চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে কবির হোসেন বলেন, ‘লঞ্চের মালিক প্রথম দিকের চিকিৎসার খরচ দিয়েছেন।
কয়েক দিন আগে ম্যানেজার বলেছেন, বিআইডব্লিউটিএ নাকি লঞ্চটির চলাচল বন্ধ রেখেছে। লঞ্চ বন্ধ থাকলে তাদের পক্ষে খরচ বহন করা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ’
সুস্থ হওয়ার পর লঞ্চের মালিক কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কবির হোসেনের।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটার জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। তাঁরা (লঞ্চ কর্তৃপক্ষ) বলেছে, আমাকে লঞ্চে একটা চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু পা তো নাই, কী চাকরি করব? কিছু টাকা পেলে নিজের গ্রামে একটি দোকান দিতে পারতাম, বসে ব্যবসা করা যেত। ’
হাসপাতালে কবির হোসেনের দেখাশোনা করছেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা আক্তার (পারুল)। নিজেদের আর্থিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
খাদিজা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কেউ নাই। যদি সহযোগিতা না পাই সংসার চালানোর কোনো উপায় আমাদের নাই। আমাদের মেয়েটার ভবিষ্যতের কী হবে জানি না। এই সংসার চলবে কী করে?
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
ইএস/এএটি