ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘পিকে হালদারের হিসাবে ৬০৮০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
‘পিকে হালদারের হিসাবে ৬০৮০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন’

ঢাকা: নিজের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অস্বাভাবিক লেনদেন করেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। এছাড়া তিনি ৪২৫ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে একথা বলেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এদিন বাদী সালাহউদ্দিনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয়। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও শাহিনুর ইসলাম জেরার জন্য সময় চাইলে আদালত ১৩ অক্টোবর জেরার জন্য দিন ধার্য করেন।
  
দুদক কৌঁসুলী মীর আহম্মেদ আলী সালাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার বাদী সালাউদ্দিন তার জবানবন্দিতে বলেন, শুরুতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা তার ২৮৩ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাই। যার মধ্যে ১২ কোটি টাকা তিনি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন হিসেবে নেন। বাকি ২৭৪ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মামলাটি তদন্তকালে দেখা যায় পিকে হালদারের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা। তাছাড়া তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অস্বাভাবিক লেনদেন হয়। যার মাধ্যমে তিনি দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অপরাধ করেছেন।
 
জবানবন্দিতে দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামি পিকে হালদার তার অর্জিত সম্পদের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা কানাডার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। স্থানান্তরিত টাকার মধ্যে তার নিজ নামে ২৪০ কোটি ও মায়ের নামে ১৬০ কোটি টাকা রয়েছে। বাকি টাকা তার আত্মীয় স্বজন ও দুটি প্রতিষ্ঠান এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের নামে আছে। যার মাধ্যমে তিনি মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অপরাধ করেছেন।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত। ওইদিনই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
 
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কারাগারে থাকা সুকুমার মৃধা, তার কন্যা অনিন্দিতা মৃধা, শঙ্খ ব্যাপারী ও অবন্তিকা বড়াল সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।  

পিকে হালদারসহ মামলার ১০ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, সহযোগী ও ঘনিষ্ঠজন পূর্ণিমা রানী হালদার, অমিতাভ অধিকারী, রাজীব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, উত্তম কুমার মিস্ত্রি ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

প্রায় ২৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি এ মামলা করে দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। এরপর ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একই কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।  

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ভারতে গ্রেফতার পি কে হালদার তার নামে এবং বিভিন্ন আসল ও জাল কোম্পানি ও ব্যক্তির নামে বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ভারতের ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি) গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে কয়েক মিলিয়ন টাকার আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে পি কে হালদারসহ দুজনকে গ্রেফতার করে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার ১৭৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেছেন। তিনি এসব অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা জমা রাখেন এবং নামে-বেনামে ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
কেআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।