ঢাকা: রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্সের (১৭) ভুল চিকিৎসায় খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলা নিরুপণ করতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ওই শিক্ষার্থীর বাবার করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধানের মনোনীত তিন চিকিৎসক (সহযোগী অধ্যাপকের নিচে নয়) এ তদন্ত করবেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি এ তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে।
রুলে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলা নিরুপণ করে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, ঢাকা জেলা প্রশাসক, খিদমাহ হসপিটাল (প্রা.) লিমিটেড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে শিক্ষার্থীর বাবা আবুল কাশেম এ রিট দায়ের করেন। আবেদনের আইনজীবী ছিলেন মুনতাসীর মাহমুদ রহমান।
শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও ব্যারিস্টার বিভূতি তরফদার।
রিটে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ‘ভুল চিকিৎসায় খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভুল চিকিৎসায় খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নবম শ্রেণির ছাত্র তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্স গত ২৮ ডিসেম্বর মারা গেছে। মুগদায় পরিবারের সঙ্গে প্রিন্স থাকতো।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর খিলগাঁওয়ের খিদমা হাসপাতালে প্রিন্সের পিত্তথলির অপসারণ করা হয়। রাত ১২টার দিকে অপারেশন করেন ক্যানসার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির। তবে অপারেশনের পর জটিলতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় পরদিন তাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। বাসায় ফিরে প্রিন্সের অবস্থার আরও অবনতি হলে ২১ ডিসেম্বর খিদমাহ হাসপাতালে তাকে আবারও নেওয়া হয়।
প্রিন্স মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলেও ডা. জাহাঙ্গীর কবির পাত্তা দেননি প্রিন্সের মা পারভীন আক্তার এমন অভিযোগ করে বলেন, ডা. জাহাঙ্গীর কবির অবস্থা জেনে রক্তের টেস্ট ও আলট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। কিন্তু হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা ২১ ডিসেম্বর রাতে টেস্ট করতে দেননি। প্রিন্সের অবস্থা আরও অবনতি হলে মধ্যরাতে খিদমা হাসপাতাল থেকে বলা হয়- প্রিন্সের আইসিইউ লাগবে। স্থানান্তর করতে হবে অন্য কোনো হাসপাতালে। দিশেহারা হয়ে স্বজনরা তাকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেন। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা খুবই খারাপ। বেশ কিছু পরীক্ষার পর দেখা যায়- তার খাদ্যনালিতে বড় ধরনের ছিদ্র হয়ে ভেতরে পানি জমেছে। পানির সঙ্গে খাবারও গেছে। এরপর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুই দফা অপারেশন হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। ২৮ ডিসেম্বর প্রিন্স মারা যায়।
স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রিন্সের চিকিৎসা দেখভাল করেছেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ফয়সল। গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক কথা না বললেও দাবি করেন- আগের অপারেশনে বড় ধরনের ভুল হয়েছে। মৃত্যু সনদেও কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে খাদ্যনালিতে ছিদ্রের কথা।
প্রিন্সের মৃত্যুর ঘটনায় ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবির দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো রকম অবহেলা করিনি। এ বিষয়ে খিদমাহ হাসপাতালের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে হাসপাতালের ম্যানেজার ডা. আনসার মৌখিকভাবে জানান, ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ মতোই তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
ইএস/আরবি