জয়পুরহাট: হাজার হাজার মামলা জটে থমকে আছে জয়পুরহাট জেলা জজ আদালত। বাদী বিবাদীরা বছরের পর বছর আদালতে হাজিরা দিলেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশ তারা।
আইনজীবীরা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনের ধীরগতি, বিচারক সংকটসহ নানা কারণেই মামলার জট হচ্ছে।
৪০ বছর আগে ১০ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মামলা করেছিলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বহরমপুর গ্রামের আবু নাছেরের বাবা। আজ তার বাবা বেঁচে নেই। কিন্তু আরও মামলার রায় হয়নি। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সেই মামলাটি চালাতে হচ্ছে আবু নাছেরকে। এখন তার বাবা বেঁচে না থাকলেও সন্তান হিসেবে তিনিই সেই মামলায় মাসে মাসে হাজির হচ্ছেন আদালতে। আর মামলায় হাজিরা দিতে দিতে এখন তিনি অনেকটাই ক্লান্ত।
আবু নাছের বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন জমি কেনা নিয়ে প্রতিবেশী একজনের সঙ্গে আমার বাবা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় এ মামলার সুরাহা দেখতে পারেননি। আবার আমিও যুবক থেকে ৪০ পার করছি, আমার জীবদ্দশায়ও হয়তো এ মামলা শেষ হবে না।
জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী উত্তরের ছোট জেলা জয়পুরহাটে মাদক, চোরা চালান, খুন, গুম, হত্যা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিনিয়তই মামলা হচ্ছে। এসবের মধ্যে ফৌজদারি মামলাই রয়েছে বেশি।
আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০০৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিলাম। সেটি এখনো চলছে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত। শুধু আক্কেলপুর উপজেলার রবিউল ইসলামই নন, এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন জেলার বিভিন্ন মামলায় হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর আদালতে ঘুরেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে উদ্যেগ প্রকাশ করে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন জয়পুরহাট জেলা শাখার আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. নূর আলম মল্লিক বলেন, হাজার হাজার নিরীহ মানুষ বছরের পর বছর আদালতে হাজির হলেও নানা কারণে খুব সহজে তারা রায় পাচ্ছেন না। এতে তারা অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
জয়পুরহাট জজ কোর্টে দীর্ঘ দিন ধরে প্র্যাকটিস করে আসা আইনজীবী মানিক হোসেন বলেন, দ্রুত রায় না হওয়ায় বাদী বিবাদীরা অনেক সময় মামলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যে কারণে তারা অনেক সময় এসব মামলার খোঁজ খবরও রাখেন না। এছাড়া স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে কখনো কখনো ৩০/৪০ জনেরও বেশি সাক্ষী করা হয়। তাদের অনেকেই হাজির হতে চান না। যে কারণে মামলার রায় দিতে দেরি হয়।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, নিয়মিত সাক্ষীদের হাজিরা না দেওয়া, বিচারক সংকট, পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন সময় মতো আদালতে জমা না দেওয়াসহ নানা কারণেই প্রায় ৪০ হাজার মামলার জট রয়েছে।
উল্লেখ্য, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাধ মণ্ডলের দেওয়া তথ্য মতে, প্রায় ৪০ হাজার মামলা জটের মধ্যে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। আবার এ কয়েক দিনে পাঁচ উপজেলা থেকে আরও কিছু মামলা যোগ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২২
এসআই