ঢাকা: কক্সবাজার সুমদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে ২৬০ এবং সুগন্ধা পয়েন্টে ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসক।
এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর জেলা প্রশাসককে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে বুধবার ( ৯ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করেন।
আদালতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে, ৭ ফেব্রুয়ারি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
নোটিশে বলা হয়, কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখতে সেখান থেকে সব অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থে এইচআরপিবি আদালতে রিট মামলা দায়ের করলে আদালত রায় দেন। রায়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৭ জুন বিবাদিদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও এখনও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কয়েকদিন আগে এইচআরপিবির প্রতিনিধি সমুদ্র সৈকত এলাকায় পর্যবেক্ষণে গেলে ওই এলাকায় অনেক অবৈধ দখল ও স্থাপনা দেখতে পান। যদিও এর আগে রায় হওয়ার পরে আদালতের নির্দেশে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই দখল ও স্থাপনা ভাড়া দিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা আয় করছে কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা আদালত অবমাননার সামিল। এতেও সাড়া না পেয়ে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। ২৫ আগস্ট আদালত অবমানার অভিযোগের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করে ডিসিকে তলব করেন।
ওইদিন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, কক্সবাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা পর সেটা উচ্ছেদও করা হয়েছিল। কিন্তু ইদানিং প্রায় ১শ’র মতো দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার মাস আগে আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। এরপর দীর্ঘ শুনানির পর বার বার সময় নেওয়ার পরও জেলা প্রশাসক ওই সব স্থাপনা উচ্ছেদ করেননি। যে কারণে জেলা প্রশাসকসহ সবার ওপর আদালত অবমনানর অভিযোগে একটা রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে ১৯ অক্টোবর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এ আদেশ অনুসারে ১৯ অক্টোবর হাজির হন জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। আদালতে একটি হলফনামা জমা দেন জেলা প্রশাসক।
সেই হলফনামায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের জেলা প্রশাসকের পাঠানো একটি স্মারক যুক্ত করা হয়।
সেই স্মারকে বলা হয়, আদালতের আদেশ অনুসরণে উচ্ছেদ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ১০ অক্টোবর পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সুগন্ধা পয়েন্ট,লাবনী ও কলাতলী সমুদ্রসৈকত এলাকায় ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু দুটি সমিতি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আদেশ দেখান।
ওই আদেশে দেখা যায়, সুগন্ধা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে জাকির হোসেন ও অপর একজন সৈকতে অবস্থিত তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেন এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদ না করার আদেশ দেন। ফলে ১০ অক্টোবর দুটি সমিতির ২৩৩টি (১৪৩+৯০) দোকান উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। তবে সরেজমিন পরিদর্শেনে দেখা গেছে দোকানদাররা তাদের মালামাল বেশিরভাগই সরিয়ে নিয়েছেন এবং অবশিষ্ট মালামাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
শুনানি শেষে জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৯ নভেম্বরের আদালতের আদেশ প্রতিপালনের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বুধবার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, কক্সবাজার সুমদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ২৬০ এবং সুগন্ধা পয়েন্টে ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর শুনানি শেষে রুল নিষ্পত্তি করে জেলা প্রশাসককে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মনজিল মোরসেদ আরো জানান, আরেক আদেশে আদালত বিবাদীদেরকে কক্সবাজার ‘সি বিচ’র বৈশিষ্ট রক্ষায় আদালতের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সব সময় সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ উচ্ছেদ করা এলাকায় দখল বা স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সে ব্যাপারে সব সময় ভিজিলেন্স থাকতে বলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২২
ইএস/এএটি