ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ফটিকছড়ির ‘পাতলা ডাক্তার’র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
ফটিকছড়ির ‘পাতলা ডাক্তার’র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবেদন সৈয়দ শওকাতুল ইসলাম ওরফে পাতলা ডাক্তার

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সৈয়দ শওকাতুল ইসলাম ওরফে পাতলা ডাক্তারের (৮৩) বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির সমন্বয়ক সানাউল হক।

এটি তদন্ত সংস্থার ৮৬তম প্রতিবেদন।

আসামির বিরুদ্ধে ১০ জনকে হত্যা ও চারজনকে ধর্ষণসহ ৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া আসামির ছোড়া গুলিতে ১ জন জখম, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দেড় শতাধিক লোককে আটক ও নির্যাতন এবং প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলায় আসামি ছিলেন দুইজন। এরমধ্যে একজন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনায় মারা গেছেন। তার নাম আসামি সৈয়দ ওমর ফারুক ওরফে সৈয়দ মো. ফারুক হায়াত। তিনি ২০২১ সালের ৮ মার্চ মারা গেছেন। আর এখন মামলার একমাত্র একজন কারাগারে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো:

প্রথম অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ২ জুন সকাল অনুমান ছয়টা থেকে থেকে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আসামি রাজাকার শওকতুল ইসলাম ওরফে পাতলা ডাক্তারসহ অনুমান ১০/১৫ জন সশস্ত্র রাজাকার এবং অনুমান ১০০/১৫০ জন পাকিস্তানি আর্মি চট্টগ্রাম জেলা সার্কিট হাউজের আর্মি ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ১৪ নম্বর নানুপর ইউনিয়নের নানুপুর সৈয়দপাড়া গ্রাম এবং মাইজভাণ্ডার আমতলী গ্রামের ওয়াইজ কাজী বাড়ি, সিকদার বাড়ি ও আমতলী বাজার এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নানুপুর সৈয়দ পাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মির্জা আবু আহম্মদের কোম্পানির ম্যানেজার হিরণ্য কুমার দত্ত বাবু ও ১৪ নম্বর নানুপর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নূর আহমদ, মির্জা আবু আহম্মদের ছেলে মির্জা মোহাম্মদ আকবর ও বোন সৈয়দা গুল চম্পা বেগম এবং তাদের প্রতিবেশি মুক্তিযোদ্ধা ইপিআর সুবেদারের স্ত্রী তাহেরা বেগমসহ প্রায় দুই শতাধিক লোককে আটক ও নির্যাতন করে।

এরপর আটককৃত হিরণ্য কুমার দত্ত বাবু ও চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুর আহম্মেদকে নানুপুর বিনাজুড়ি খালের পাড়ে নিয়ে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে পাঁচটার সময় গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি আর্মিরা অস্ত্রের মুখে আটককৃত অন্যান্যদের ছেড়ে দিয়ে মির্জা মোহাম্মদ আকবর, সৈয়দা গুল চম্পা বেগম ও তাহেরা বেগমকে আটক ও অপহরণ করে ওই দিন রাত অনুমান আটটার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস নিয়ে যায়। পরের দিন সকাল অনুমান নয়টায় তাদেরকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিয়ে আটক রেখে অমানসিক নির্যাতন করে মির্জা মোহাম্মদ আকবর ১৫ দিন পরে ছেড়ে দেয় এবং আটককৃত ভিকটিম সৈয়দা গুল চম্পা বেগম ও তাহেরা বেগমকে ২৬ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আটক রেখে নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল আটটা থেকে দুপুর অনুমান একটা পর্যন্ত আসামি রাজাকার শওকতুল ইসলাম ওরফে পাতলা ডাক্তারসহ ১৫/২০ জন রাজাকার নিয়ে অনুমান ৪০/৫০ জন পাকিস্তানি আর্মিদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র লোকদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম জেলার নাজিরহাটে তৎকালে স্থাপিত অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানাধীন ১৪ নম্বর নানুপর ইউনিয়নের মাইজভাণ্ডার আমতলী গ্রাম ও আমতলী বাজার এলাকা এবং ১৫ নম্বর রোসাংগিরী ইউনিয়নের পূর্ব আজিমনগর গ্রামের শীল পাড়াসহ আশপাশ এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৈয়দ জসিম উদ্দিন, আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ ইসহাক এবং হাজী নূর আহম্মেদকে অস্ত্রের মুখে আটক ও অপহরণ করে আজিমনগর শীল পাড়ায় নেয়।

এরপর শীল পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবেন্দ্র কুমার শীল, হেমেন্দ্র কুমার শীল, মোহন্ত কুমার শীলকে অস্ত্রের মুখে আটক ও নির্যাতন আগে তাদের বাড়ির মালামাল লুটপাট করে। রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা ইতোপূর্বে আটককৃত সৈয়দ জসিম উদ্দিন, আব্দুস সালাম, ইসহাক ও হাজী নূর আহম্মদকে রায় মোহন শীল ওরফে বোঁচা ডাক্তারের (বর্তমানে মৃত) বাড়ির উঠানে দাঁড় করিয়ে দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টায় গুলি করলে হাজী নূর আহম্মদ ব্যতীত অপর তিনজন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ হাজী নূর আহম্মদ ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।

এছাড়াও আজিমনগর শীলপাড়ায় আটককৃত হেমেন্দ্র কুমার শীল, দেবেন্দ্র কুমার শীল ও মোহন্ত কুমার শীলদের বসত বাড়ির কাছের পুকুরপাড়ে দেবেন্দ্র কুমার শীলকে এবং অনুমান ৩শ গজ দক্ষিণে আবাদী জমিতে হেমেন্দ্র কুমার শীল ও মোহন্ত কুমার শীলকে দুপুর অনুমান ১টায় গুলি করে হত্যা পূর্বক উল্লেখিত পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকাররা নাজিরহাট অস্থায়ী পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পের দিকে চলে যায়।

তৃতীয় অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর ভোর অনুমান চারটা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত সময়ে আসামি রাজাকার শওকতুল ইসলাম ওরফে পাতলা ডাক্তারসহ ১০/১২ জন রাজাকারদের নিয়ে ৩০/৪০ জন পাকিস্তানি আর্মি স্বাধীনতাকামী হিন্দুদের ওপর চট্টগ্রাম জেলার নাজিরহাটে অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ১৪ নম্বর নানুপর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত মাইজভাণ্ডার সূত্রধর পাড়া (সূতার পাড়া) আশপাশ এলাকায় অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অনুমান ৩০/৩৫টি বাড়ির সব মালামাল লুটপাট করতঃ অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়াও রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা পলায়নরত গ্রামবাসীদের মধ্যে সূত্রধর পাড়ার নিকুঞ্জ সূত্রধর, অনিল চন্দ্র সূত্রধর, রনজীত সূত্রধর, কল্পনা সূত্রধর, কানন বালা সূত্রধর (বর্তমানে মৃত) এবং সূত্রধর পাড়ার লাগোয়া মাইজভাণ্ডার পাঠান পাড়ার আকবর খান ওরফে আবু, নজির আহম্মদ, মো. ফজল কাদেরদেরকে আটক করে। এরপর আটকদের মধ্যে নিকুঞ্জ সূত্রধর ও অনিল চন্দ্ৰ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।