অনেকে একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেতে বাসায় পাখি পুষে থাকেন। পাখি পুষতে চাইলে কিছু বিষয় আগে থেকে জেনে রাখা ভালো।
কী কী পাখি পুষবেন
সব পাখি পোষা যায় না। সব পাখি পোষ মানেও না। কিছু পাখি আছে যেগুলো পোষা আবার আইনত দণ্ডনীয়। যেমন: দেশি ময়না, টিয়া, শ্যামা, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, ফিঙের মতো বন্য পাখি। তবে কিছু বিদেশি পাখি আছে, যেগুলো পুষতে কোনো বাধা নেই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাজরিগর, ককাটিয়েল, জাভা, লাভ বার্ড, মুনিয়া বা ফিঞ্চ, রিং নেক কুনুর, প্যারট, কাকাতুয়া, তোতা, লরিকিট, ম্যাকাও ইত্যাদি।
পাখির দাম কোথায় কেমন
কাঁটাবন পশুপাখির মার্কেট পোষা প্রাণী বিকিকিনির বড় বাজার। এছাড়া পুরান ঢাকা, মিরপুর, টঙ্গীসহ ছোট-বড় মার্কেটের পশুপাখির দোকান থেকে পাখি কিনতে পারেন। ঢাকা ও এর আশপাশে পোষা পশুপাখির কিছু সাপ্তাহিক হাট বসে। কিনতে পারেন সেখান থেকেও। জাতভেদে এসব পাখির দাম একেকরকম হয়ে থাকে। সান কুনুর জোড়া ৪০ হাজার টাকা, আফ্রিকান গ্রে প্যারট জোড়া এক লাখ, ককটেইল জোড়া ছয় হাজার, লাভ বার্ড জোড়া পাঁচ হাজার, জেব্রা ফিনস জোড়া ৮০০, বেঙ্গলি ফিনস জোড়া দুই হাজার, পার্ল ফিনস জোড়া চার হাজার, লিটল প্যারাকিট জোড়া এক হাজার, ময়না ১০ হাজার, ইংলিশ বাজিগর জোড়া সাত হাজার, জাভা জোড়া তিন হাজার, শালিক জোড়া এক হাজার, তোতা জোড়া ছয় হাজার, ম্যাকাও দেড় লাখ, কাকাতুয়া দুই লাখ, রোজেলা জোড়া ৪০ হাজার টাকা।
পাখির নাম রাখুন
বাসায় আনার পর পোষা পাখির সুন্দর একটি নাম দিন। এই নামেই পরিবারের অন্য সব সদস্যের সঙ্গে পোষা পাখিটির আত্মিক একটি সম্পর্ক গড়ে উঠবে। পাখির মনোযোগ আকর্ষণ করতে নির্দিষ্ট নাম ধরে ডাকুন। খুনসুটিও করতে পারেন। কিছু পাখি কথা বলতে পারে। এদের সঙ্গে গল্প করতে পারেন। আপনার ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরও অবসরের সময়টি অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে।
পাখি কোথায় রাখবেন
পোষা পাখির জন্য সুন্দর একটি খাঁচা দরকার সবার আগে। পাখির পায়ের সঙ্গে দড়ি বেঁধে রাখবেন না। পাখিটির আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাঁচা কিনুন অথবা বানিয়ে নিন। খাঁচার ভেতর পাখির আরামের দিকে নজর দিন। পাখির পানপাত্র, খাবারপাত্র, বসে থাকার লাঠি, বিশ্রামের ব্যবস্থা, ডিম দেওয়া ও বাচ্চা লালনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখুন। পাখির খাঁচা বারান্দায় যেখানে আলো-বাতাস চলাচল করে সেখানে রাখুন। কাক, চিল, ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, বাঘডাশার মতো মাংসাশী প্রাণীদের থেকে খাঁচা নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। অতিরিক্ত রোদ, ঝড় ও বৃষ্টি থেকেও খেয়াল রাখতে হবে।
পোষা পাখির খাবার
একেক পাখি একেক ধরনের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। কিছু পাখি শস্য, বীজ, শাক-সবজিজাতীয় খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার কিছু পাখি আছে যারা ফলমূল, ফলের রস খেতে বেশি পছন্দ করে। পাখি কেনার সময় পাখির খাদ্যের দিকটাও বিবেচনায় রাখুন। দোকানদারের কাছ থেকে পাখিটির খাবার, খনিজ ও পানীয় সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। পোষা পাখির দোকানেই পাবেন পাখিদের জন্য প্যাকেটজাত খাবারসহ শস্য ও দানাদার খাবার।
যত্ন ও চিকিৎসা
পোষা প্রাণী হিসেবে পাখি পালনে ঝামেলা খুবই কম। পাখিদের অন্যান্য পোষা প্রাণীর তুলনায় অনেক সহজেই যত্ন নেওয়া যায় এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। পাখিদের জন্য আলাদা রাখার জায়গা, প্রতিদিন খাবার তৈরির ঝামেলা নেই। তবে পাখির খাঁচা, খাবার পাত্র ও খাবারের গুণাগুণের দিকে সতর্ক থাকতে হবে। পাখির বিষ্ঠা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। রাতে বা একান্তে থাকার জন্য আলাদা মাটির কলস খাঁচার ভেতর রাখতে হবে। রাতে পাতলা কাপড় দিয়ে খাঁচাটিকে ঢেকে রাখুন। যেকোনো পাখি এক জোড়া পালন করা ভালো। এতে তারা সঙ্গ পায়। সুস্থ থাকে। পাখির গোসলের জন্য বড় পাত্রে দুপুরে পানি ভরে দিতে পারেন। প্রতি দুই মাস অন্তর একবার ভেটেরিয়ান সার্জনকে দেখিয়ে আনতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৪
এএটি