আধুনিক জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসে নানা অনিয়ম ও সময়ের অভাবে শরীরচর্চার প্রতি অনীহা— আমাদের শরীরে ডেকে আনে নানা রোগব্যধি। যত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছি আমরা, তত বেশি করে অসুখ কামড় বসাচ্ছে শরীরে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা অনুযায়ী, ওবিসিটি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো সমস্যা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। আর সেই সব রোগের হাত ধরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হৃদ্রোগর ঝুঁকিও। আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। ১৮ থেকে ৬০— সব বয়সিদেরই কাবু করছে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বা সাইলেন্ট অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (এসএএমআই)।
চিকিৎসকদের মতে, রোজের রুটিনের বেশ কিছু ভুল আমাদের ঠেলে দিচ্ছে হৃদরোগের দিকে। কিছু ভুল আমরা জেনেবুঝে করছি, কিছু অভ্যাসের কুপ্রভাব অজান্তেই মারণরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জীবনশৈলিতে কী কী পরিবর্তন আনলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমবে?
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে সবার আগে ধূমপান একেবারে ছাড়তে হবে। ধূমপান ও তামাকজাত কোনো দ্রব্য হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। এর পাশাপাশি মদ্যপানেও লাগাম টানতে হবে। পরিমিত মদ্যপানে সমস্যা নেই, সবে রোজ রোজ নিয়ম করে মদ খেলে শরীরে হৃদরোগ বাসা বাঁধার আশঙ্কাও বাড়বে।
ওজন বাড়লে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন কত হওয়া উচিত, তা জেনে নিন। ওবিসিটির সমস্যা থাকলে সাবধান। ওজন কমানোর জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে ডায়েটের ওপর নজর দিন। কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমাতে হবে। ডায়েটে বেশি করে শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। অল্প অল্প করে বার বার খান। বাইরের খাবার নয়, বাড়িতে তৈরি খাবার খান। ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, রেডমিট এড়িয়ে চলুন। খাবারে নুন ও চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনুন।
সপ্তাহে পাঁচদিন শরীরচর্চা করতেই হবে। ৭ দিন করতে পারলে খুব ভালো। ভারী শরীরচর্চা না করলেও রোজ অন্ততপক্ষে আধ ঘণ্টা দ্রুত গতিতে হাঁটতে পারেন। সঙ্গে কিছু হালকা ব্যায়াম করলেও হবে।
রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে স্ট্রোক, হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত যদি ঠিক মতো ঘুম না হয়, তা হলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো মতো হয় না। কাজেই শরীর তখন স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়, যার ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে। রাতে ঘুমোনোর আগে অনন্ত ঘণ্টাখানেক আগে মোবাইল কিংবা যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্র থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। দেখবেন ঘুম ভালো আসবে।
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে নানা বিষয় নিয়েই আমরা অত্যধিক চাপে থাকি। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, বেশি খাওয়া, ধূমপান, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি দেখা দেয়। সেই জন্য কোনো ধরনের মানসিক চাপ বা উদ্বেগকে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করুন। উদ্বেগ কমাতে ধ্যান করতে পারেন। বই পড়া কিংবা গান শোনার অভ্যাস থাকলে, সেগুলোও চাপমুক্ত করতে সহায়তা করে। কাজের সময় বেঁধে দিন। অফিসের কাজ বাড়ি বয়ে আনবেন না। অবসরে নিজের পছন্দের কাজ, যেমন ঘুরতে যাওয়া, ছবি তোলা, সিনেমা দেখার ওপর জোর দিতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২৪
এএটি