জানুয়ারিতেই অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছে। নতুন স্কুলে যাওয়া নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে নানা ভীতও কাজ করে শিশুমনে।
* স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক সক্ষমতা শিশুর রয়েছে কি না তা বুঝতে হবে অভিভাবককে। শারীরিক প্রস্তুতির অভাবে স্কুলে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে শিশুরা।
* শিশুকে শারীরিক দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সেই ক্ষেত্রে তাদের খেলাধুলা ও বয়স উপযোগী ব্যায়াম করানো যেতে পারে।
* নির্দিষ্ট বয়সীদের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা নিজের সন্তানের আছে কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে অভিভাবককে। স্কুলে গিয়ে শিক্ষকের নির্দেশনা বুঝে সাড়া দিতে শিশুর এই সক্ষমতা প্রয়োজন হয়।
* বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হলে তার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে অভিভাবককে। এছাড়া তাদের জন্য তৈরি বিশেষ স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হঠাৎ অনেক নতুন শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে অনিরাপদ অনুভব করতে পারে।
* অপরিচিত মানুষের সঙ্গে মিশতে অনেক শিশুই ভয় পায়। তাই স্কুলে পাঠানোর আগে সন্তানকে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া যেতে পারে।
* স্কুলে গিয়ে অনেক শিশু মা-বাবা থেকে দূরে থাকতে পারে না, কান্নাকাটি করে। শহরকেন্দ্রিক ও একক পরিবারে বসবাস করা শিশুদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা বেশি দেখা যায়।
* হঠাৎ শিশুরা নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এজন্য শিশুদের আগে থেকেই এ বিষয়ে শেখানো উচিত।
* শিশু যে স্কুলে পড়াশোনা করবে সেখানে শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
* স্কুলের অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে শিশুরা যদি শারীরিক আঘাত পায় কখনো, তবে তাদের মনে ভয় ও শঙ্কার সৃষ্টি হবে। যা তাদের মনে স্কুলবিমুখতা তৈরি করতে পারে।
* স্কুলে ভর্তির আগে অভিভাবকরা স্কুল পরিদর্শন করে নিতে পারেন। শিক্ষক ও স্কুলে চাকরিরত অন্য ব্যক্তিদের আচরণ শিশুমনে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে। স্কুল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে শিশুদের সাদরে গ্রহণ করতে হবে।
* শিশুরা তাদের গ্রহণযোগ্যতা অনুভব করতে পারলে স্কুলের প্রতি বেশি করে আগ্রহী হবে। শিশুদের প্রতি কোমল আচরণ করতে হবে।
* স্কুলের নিয়ম-কানুনগুলো শিশুর বয়স উপযোগী হওয়া খুব প্রয়োজন, তা নাহলে শিশুরা ভয় পেতে শুরু করবে। মনে ভীতি সৃষ্টি হলে শিশুরা আর স্কুলে যেতে চাইবে না। প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে শিশুদের জীবন শৃঙ্খলিত রাখার জন্য।
* স্কুলের প্রথম দিকের দিনগুলোকে শিশুর জন্য উপভোগ্য করে তুলতে হবে। শিশু যেন স্কুলে গিয়ে আনন্দ পায়, স্কুলকে যেন বাসার থেকেও সুখের জায়গা মনে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম দিকের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শিশুকে স্কুলের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।
* অনেক শিশু স্কুলে গিয়ে টয়লেট চেপে রাখে। তাই অভিভাবকদের বাড়ি থেকেই শিশুকে টয়লেট যাওয়ার নিয়ে ট্রেনিং করাতে হবে। এছাড়া আপনার সোনামণিকে যে স্কুলে দেবেন। সেই স্কুলে টয়লেট ব্যবস্থা কেমন, একটু গিয়ে জেনে নিন।
* স্কুলে কিছু জিনিস বাচ্চাদের নিজেকেই করতে হবে। প্লে স্কুল দুই ঘণ্টার জন্য, তাই টিফিনের প্রয়োজন পড়ে না আবার হতেও পারে। তবে অনেক স্কুলই বলে দেয়, বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে দিতে। যাতে নিজে খাওয়ার অভ্যাস হয়। এমন অভ্যাস বাড়ি থেকেই তৈরি করতে পারেন।
* বছর আড়াইয়ের শিশুটিকে নিজের ব্যাগ গোছানোর দায়িত্ব দিতে পারেন। নিজে থেকে জামা-কাপড়, জুতা পরার কাজও শেখানোর চেষ্টা করুন। শিশু বয়স থেকে স্বনির্ভর তো হবেই, বাড়বে দায়িত্ববোধও।
* স্কুল ছুটি হওয়ার আগে বা ছুটির পর নিজের বই-খাতা ঠিকমতো ব্যাগে নিতে হবে। বাসায় আসার পর শিশু নিজ থেকে ব্যাগ পড়ার টেবিলে ও স্কুলের পোশাক খুলতে শেখাবেন অভিভাবকরা। এসব অভ্যাস প্রথম থেকে শেখালে শিশু আর অলস হবে না। একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে আস্তে আস্তে।
* স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সালাম দেওয়া ও বড় ও সহপাঠীদের সম্মান করাও শেখাতে হবে।
সমস্যা সমাধানে যা করবেন
* শিশুর যদি স্কুলে মানিয়ে নিতে সমস্যা ও স্কুলবিমুখতা তৈরি হয়, তাহলে বুঝতে হবে শিশুর স্কুলে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে বা স্কুলের পরিবেশ তার জন্য উপযুক্ত নয়। সেই ক্ষেত্রে শিশুকে সরাসরি না বলে তার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা প্রকাশের মাধ্যমে স্কুলে যেতে চাইবে না। কখনো ঘুম থেকে উঠতে না চাওয়া বা কখনো প্রচুর কান্না করা, পেটে ব্যথা বা শরীর গরম হওয়া বিষয়গুলো প্রকাশ পাবে।
* শিশু স্কুলে যেতে না চাইলে অভিভাবকরা শুধু নিজেদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা না করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এছাড়া প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করা যেতে পারেন।
যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন অভিভাবকরা
* বাড়িতে সব ট্রেনিং দেওয়ার পরেও শিশু স্কুলে যেতে অনিচ্ছুক হতে পারে। এই ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে কৌশলে। কেউ স্কুলে তাকে বকেছে বা মেরেছে কি না। এছাড়া তার প্রাইভেট পার্ট স্পর্শ করেছে কি না। তার থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে স্কুলে কথা বলতে হবে অভিভাবককে।
* যে স্কুলে ভর্তি করছেন, সেখানে ক’জন কেয়ারিং স্টাফ আছেন তা আগে থেকে জেনে নিন।
* সন্তান কিছুটা বড় না হওয়া পর্যন্ত পড়তে বসলে তার সামনে থাকুন। এমন একটা সময় তার পড়ার জন্য বরাদ্দ করতে হবে, যে সময়টাতে আপনি ওর পাশেই থাকতে পারবেন।
* পড়াশোনা যে আতঙ্ক নয়, তা বোঝাতে হবে খুদেকে। পড়ার বিষয়গুলো গল্পের মতো করে বোঝান। লেখার অভ্যাস তৈরি করুন পাশে বসেই। ভালো করলে প্রশংসাও করুন। আপনাকে পাশে পেলে শিশুর পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৫
এএটি