ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

কর্মক্লান্তি দূর করতে রং চা নাকি দুধ চা খাবেন? 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৯, জুন ১২, ২০২৫
কর্মক্লান্তি দূর করতে রং চা নাকি দুধ চা খাবেন?  রং চা এবং দুধ চা পাশাপাশি

মৌলভীবাজার: দুটি পাতা একটি কুঁড়ি – এ নিয়েই চা। দিগন্তবিস্তৃত চা বাগানের কোটি-কোটি দুটি পাতা একটি কুঁড়ি নিয়েই অবশেষে নানান উপায়ে প্রক্রিয়াজাত হয় দানাদার চা।

কর্মক্লান্তি দূর করতে চায়ের জুড়ি মেলা ভার। খুব মাথা ধরেছে? শরীরে ম্যাজ-ম্যাজ ভাব বা অবসাদ? কিংবা টেনশন, উৎকণ্ঠা? ঠিক তখনই হয়ে যাক এক কাপ চা।  

কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠা কর্মপ্রিয় মানুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটাই ওষুধ ‘চা’। কেননা, মুহূর্তে একটি শরীরকে চাঙা করে তোলে। দ্রুততার সাথে সতেজ করে তুলে মন। পরবর্তী কাজে অধিক মনোযোগী হওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে খুব সহজেই একটি প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় – কোন চা? ‘দুধ চা’, ‘রং চা’ নাকি ‘গ্রিন-টি’ অথবা অন্যান্য?

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যদি হেলথ বেনিফিটের কথা চিন্তা করি তাহলে দুধ চায়ের তুলনায় রো টি বা রং চা বেটার। চায়ের মূল উপাদান হলো পলিফেনল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। হোটেল-রেস্টুরেন্টের দুধ চায়ের নানান উপাদান মেশানোর ফলে পরিফেনলটা নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, তবে এখানে একটা বিষয় আছে গুরুত্বপূর্ণ যা সবার জানা থাকা দরকার। রং চা হেলথ বেনিফিটের কথা চিন্তা করে বেস্ট, এটা ঠিক আছে। কিন্তু কখনো কখনো দুধ চা তুলনামূলক ভালো। বিশেষ করে রাস্তার পাশের টং দোকানগুলোতে সারাদিন ধরে চা ফোটাতে থাকে। কিন্তু চা তৈরির সঠিক নিয়ম হলো ফুটন্ত গরম পানি করে ব্ল্যাক-টি বা গ্রিন-টি যেটাই হোক না কেন চা চামচে আড়াই গ্রাম বা তার সমান কমবেশি পরিমাণ এক কাপে দিয়ে সেখানে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তখন তার মধ্যে থেকে পলিফেনল বের হবে এবং এটাই আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।  

এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে ড. শামীম বলেন, কিন্তু রাস্তার ধারের টং দোকানগুলো সারাদিন ধরে চা ফুটায়। সকালে এক কেজি পাতা দিয়ে সারাদিন জাল দিয়ে ফোটাতেই থাকে। তাতে করে কি হয় –এক ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ ‘ট্যানিন’ (Tannin) বের হয়ে আসে। টঙের দোকানের এই পদ্ধতির রং চা খেলে অনেক সময় থ্রুট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, টঙের দোকানে সারাদিন ধরে জাল দেওয়া চায়ে যদি দুধ মেশানো হয় তখন ওই ক্ষতিকর ‘ট্যানিন’টাকে বার্ন করে (নষ্ট করা) ফেলে। এর ফলে এটা আর গলায় লাগে না, সরাসরি স্টোমাকে (পাকস্থলী) চলে যায়। গলায় না লাগায় থ্রুট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। সেক্ষেত্রে আমরা চা সাজেস্ট (পরামর্শ) করে থাকি যে- টঙের দোকানে রং চা না খেলে দুধ চা খাওয়া অনেক ভালো ওই ট্যানিনের হাত থেকে বাঁচার জন্য।  

চায়ের উপকার সম্পর্কে তিনি বলেন, চায়ের অন্যতম উপাদান হলো ক্যাফেইন ও পলিফেনেল। এক কাপ চায়ে ৬৪ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত করে। ফলে শরীর ও মন চাঙা হয়। এটি মানসিক সচেতনতা বাড়ায়, অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে ও শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে। পলিফেনল মূলত ক্যাটেচিন, থিয়াফ্লাভিন, থিয়ারুবিজিন ও অন্যান্য ফ্লাভোনয়েডের সমন্বয়ে গঠিত জৈব-রাসায়নিক উপাদান। চায়ের পলিফেনলই মূলত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক কাপ চায়ে ১২৮ মিলিগ্রাম পলিফেনল থাকে। চায়ের মূল উপাদানের ৪০ শতাংশই পলিফেনল।

এক কিলোগ্রাম কালো চা দিয়ে ৪শ কাপ পানীয় চা বানানো যায়। সে হিসাবে এক কাপ চা বানাতে ২ দশমিক ৫ গ্রাম কালো চা লাগে। এক কাপ চা বানাতে পানি লাগে ১৫০ মিলি। অভ্যাসবশত এক কাপ চায়ে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ দুধ এবং এক চা চামচ চিনিই যথেষ্ট। এসব মিলিয়ে এক কাপ চা থেকে ৪২ কিলো ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায় বলে জানান এই চা বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন।

বিবিবি/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।