আমাদের দৈনন্দিন আচার-অভ্যাসের মধ্যে কিছু কিছু এমন কাজ আছে যা ক্ষতিকর। একটু চেষ্টা করলেই স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর এসব বদভ্যাস থেকে মুক্ত হতে পারি আমরা।
১. দেরিতে ঘুম থেকে উঠার কারণে বা অন্য ব্যস্ততার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রায়শই মুখ ধুয়ে জামা-জুতো পরে আমাদের ছুটতে হয় কর্মেক্ষেত্রে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সকালে নাশতা খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যেতে হয়। কিন্তু এ কথাটা ভুলে গেলে চলবে না- সকালের নাশতাটা হচ্ছে সারাদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোজন। চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত পুষ্টি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে সকালের নাশতাটা একটু ভালোমতো করে নিতে। এরপর দিনের বাকি সময়টুকুতে নির্দিষ্ট সময় পরপর ৪ থেকে ৫ বার ছোট পরিসরের কিন্তু পুষ্টিকর খাবার নিন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর যে কোনও স্ন্যাক্সও চলতে পারে।
২. অনেকেই কফির সঙ্গে মাখনসমৃদ্ধ ক্রিমার খান। এর সঙ্গে থাকে দুধের অন্যান্য উপাদান আর সুগন্ধিযুক্ত চিনির সিরাপ। এই পানীয়টি দিনে এক বা দুই কাপ হলে ঠিক আছে। কিন্তু এর বেশি হলেই এ থেকে যোগ হওয়া বাড়তি ক্যালরি আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পড়তে পারেন এর ফলে। তাই সবচে ভালো হয় যদি ক্রিম কফিপ্রেমীরা দৈনিক কফি গ্রহণের মাত্রাটা দুই কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। পানীয়ের প্রয়োজনে যতটুকু সম্ভব পানি গ্রহণ করুন।
৩. দ্রুত খাওয়া শেষ করতে চাওয়া আজকাল প্রায় সবার মধ্যেই সংক্রমিত হয়ে গেছে। এভাবে গাপুস-গুপুস কায়দায় খাবার গ্রহণ করার বদভ্যাসটি এই মুহূর্তে ত্যাগ করুন। বিশেষ করে লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যাওয়ার লগ্নে খাবার খেতে গিয়ে এই কাজটা বেশি হয়। এতে শাসনালিতে সমস্যাসহ দম আটকে তাৎণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। ‘ধর মুরগি কর জবাই’ ধরনের তাড়াহুড়ায় খাবার না খেয়ে হয়ে ধীর-স্থিরভাবে খাবারকে উপভোগ করে খেতে হবে।
৪. বেমানান ও বেসাইজের জুতো পরিধান করাও আপনার স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ কারণে আপনার দৈনন্দিন হাঁটচলার সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিটি বদলে যেতে পারে যা আপনার জন্য হবে কষ্টকর আর অন্যদের চোখে হতে পারে হাস্যকর। মেয়েদের হাইহিল পরার ক্ষেত্রে বলা যায়, হয়তো আপনি ব্যথা অনুভব করছেন না, তারপরও দীর্ঘণ হাইহিল পরে থাকার কুপ্রভাব আপনার পা ও শরীরের ওপর পড়বেই। তাই যতটা সম্ভব বেখাপ্পা আর কিম্ভূত সাইজের এবং উঁচু হিলের বদলে আরামদায়ক এবং ফ্যাট হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পায়ে দিন। এতে চলাফেরায় অহেতুক শারীরিক ঝুঁকি নেওয়া থেকে নিরাপদ থাকবেন আপনি।
৫. অনেকেই আলসেমির ফাঁদে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে দাঁত মাজার মতো দরকারি কাজটাকে অবহেলা করেন। অবহেলাজনিত এই বদভ্যাসের দায় আপনাকে শোধ করতে হয় দাঁতে প্লাক সৃষ্টি, দাঁত ও মুখের নানাবিধ অসুখসহ পেটের পীড়া এবং গলার নানান অসুখ বাধানোর মাধ্যমে। এর সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে রাতে দাঁত না মাজার ফলে দাঁত ও মাড়িতে আস্তানা গাড়া দন্তমল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অভয়ারণ্য তৈরি করবে আপনার মুখে। বিষয়টি সমগ্র মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আপনার শিশুকেও রাতে দাঁত মাজার ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তুলুন।
৬. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। কীভাবে? ঘুমের স্বল্পতা আপনার পরিপাক ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলার কারণে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। আর ভুলে গেলে চলবে না ওবেসিটি বা স্থূলতা রোগের মূল কারণগুলোর একটি হচ্ছে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস। দৈনিক অল্প ঘুমোনোদের অনেকেই আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একটানা দীর্ঘক্ষণ মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমান। এটাও মোটুত্বের কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ঘুমান
৭. উল্টো দিকে পিঠ বাঁকিয়ে আড়মোড়া ভাঙার কায়দায় কসরত করে অনেকেই পিঠের ব্যথা দূর করে থাকেন। এতে ক্ষতির কিছু নেই। তবে ক্ষতি হতে পারে যদি আপনি ঘুম ওঠার পরপরই এই কসরতটি করতে যান। বিশ্রামে থাকা মাংশপেশিতে হঠাৎ করেই চাপ ও সংকোচনের ফলে ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে শরীরে। এ অবস্থার শিকার হতে না চাইলে ঘুম থেকে উঠেই পিঠ বাঁকানোর কসরত ত্যাগ করতে হবে আপনাকে। বিছানা ছাড়ার পর প্রাকৃতিক কাজ সারার পর দাঁত মাজা ও মুখ ধোয়ার কাজগুলো সারুন। তারপর চা-বা কফি পান করুন। এবার চাইলে আপনি পিঠ বাঁকিয়ে বা ডানে-বাঁয়ে শরীর টান (স্ট্রেচিং) করে নিন- কোনও সমস্যা নেই।
৮. চাপ অনুভূত হওয়ার পরেও মূত্রত্যাগে অহেতুক বিলম্ব করবেন না। প্রস্রাবের বেগ দীর্ঘণ চেপে রাখলে আপনার মূত্রথলির জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেবে। তাই চাপ অনুভূত হওয়ার পর তা থেকে মুক্ত হতে অহেতুক বিলম্ব করবেন না। চেষ্টা করুন মূত্রথলির জন্য অস্বস্তিকর অতিরিক্ত মশলাদার খাদ্য, চকোলেট, মদ, কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত পানীয় (কার্বোনেটেড বেভারেজ), ক্যাফেইযুক্ত পানীয় (চা-কফি) বর্জন করে চলতে।
৯. আপনার ঝোলা ব্যাগ (সাইড ব্যাগ), হ্যান্ডব্যাগ বা ল্যাপটপবাহী ব্যাগটি প্রতিদিন একই দিকের কাঁধে বহন করা থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে কাঁধ, পিঠ বা হাত ব্যথার শিকার হতে পারেন আপনি। তাই হাঁটাচলার ক্ষেত্রে কাঁধ বা হাতে ঝোলানো ব্যাগটি ডান-বাম ও সামনে পেছনে স্থান পরিবর্তন করে নিন নির্দিষ্ট সময় পরপর। এর ফলে অহেতুক কাঁধ-হাত-পিট ব্যথার কষ্ট থেকে রেহাই মিলবে।
১০. ধূমপান এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যারা ধূমপান করেন, তাদের জন্য উপদেশই বলুন আর সৎ পরামর্শই বলুন, ‘এই মুহূর্তে ধূমপান ত্যাগ করুন’ কথাটি অনেক পুরনো হয়ে গেছে। তারপরেও পুরনো সেই অনুরোধ আবারও : প্লিজ, ধূমপান ছেড়ে দিন। কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য সবদিক দিয়েই ক্ষতিকর। তবে এর বাইরে ধূমপায়ীদের দুটি গ্রুপ আছেন যারা নিজেদের বিরুদ্ধে এই ক্ষতিকর কাজটিও আরও মারাত্মক করে তোলেন। এদের একটি পক্ষ শুয়ে শুয়ে ধূমপান করেন আর অপরটি সকালে বিছানা ছেড়েই খালি পেটে সিগারেট ধরান। এই খালি পেটে সিগারেট ধরানোদের মধ্যে একদল আছেন যারা সকালে প্রাকৃতিক কাজ সারার সময়ে টয়লেটে ঢুকেন হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে। দয়া করে শুয়ে শুয়ে ধূমপান, খালি পেটে ধূমপান এবং শৌচাগারে ঢুকে ধূমপানের কুঅভ্যাসটি অন্তত ছেড়ে দিন ধূমপায়ীরা। কারণ সাধারণভাবে ধূমপান করার চেয়ে এই কায়দার ধূমপায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতির শিকার হয়ে থাকেন।
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি ও অন্যান্য সূত্র
বাংলাদেশ সময় ০০৩০, জানুয়ারি ০৯, ২০১১