এই সময়ের মিউজিক ক্রেজ আরফিন রুমী। চারদিকে এত সাফল্য থাকার পরও মনটা খারাপ রুমির।
আরফিন রুমীর দাদা ছিলেন মারফতী গানের একনিষ্ঠ সাধক। দাদার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। কিন্তু মা-বাবার মুখে দাদার গল্প শুনে পুলকিত হতেন রুমী। মাও টুকটাক গান করতেন এবং মনে মনে চাইতেন তার ছেলেটাও গান করুক। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই ছেলেবেলা থেকে সুরের পথে পা বাড়ান এই সময়ের মিউজিক ক্রেজ আরেফিন রুমী।
সময়টা খুব বেশি দিন আগের নয়। ২০০৬ সালের কথা। একদিন এক কনসার্টে ফেরদৌস ওয়াহিদ হঠাৎ করেই ঘোষণা করলেন, এখন গান গাইবে হাবিব ওয়াহিদ টু। এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক। পরে গান শোনার পর বুঝলেন, ফেরদৌস ওয়াহিদ মন্দ বলেন নি। ছেলেটার কণ্ঠে আছে হাবিবের মতোই মাদকতা।
আরফীন রুমীকে হাবিবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেছিলেন, ছেলেটাকে দেখতে পারিস। ওর মধ্যে গান আছে। হাবিব যাচাই করে দেখলেন, কথা সত্য। আরফীন রুমীকে দিয়ে ঝটপট কয়েকটা জিঙ্গেলের কাজ করিয়ে ফেললেন।
সেগুলো প্রশংসা পেলো। সবার প্রশ্ন, কার কণ্ঠে এমন জাদু ? জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েই সুপরিচিতি পেয়ে যান রুমী। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আরফীন রুমী তাই গুরু মানেন হাবিবকেই। হাবিবের মাধ্যমেই তার পরিচয় হয় মেধাবী সঙ্গীত পরিচালক ফুয়াদের সঙ্গে। ফুয়াদ কাজে লাগালেন রুমীর সহজাত সঙ্গীত-জ্ঞান। ফুয়াদের মাধ্যমেই সঙ্গীত পরিচালনার দীক্ষা নেন রুমী।
আরফিন রুমীর প্রথম একক অ্যালবাম বেরিয়েছিল তার নিজের নামেই ২০০৮ সালে। ‘আরফীন রুমী’ শীর্ষক প্রথম অ্যালবামটির ব্যাপক সাফল্যের পর ২০০৯ সালে প্রকাশ পায় দ্বিতীয় একক ‘এসো না’। এরপর নিজ ব্যান্ডদল ‘দূরবীণ’ নিয়ে বেড়ে যায় রুমীর ব্যস্ততা। গানে নিজে কণ্ঠ দেওয়ার চেয়ে সুর-সঙ্গীত পরিচালনার কাজের প্রতি বেশি জোর দেন। এ পর্যন্ত আরফীন রুমীর সুর ও সঙ্গীতে ২০টিরও বেশি অ্যালবাম বাজারে সাফল্যের মুখ দেখেছে। রুমীর সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় কয়েকটি গান দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে ঝড় তোলে। এর মধ্যে শফিক তুহিনের গাওয়া ‘এর বেশি ভালোবাসা যায় না‘, কাজী শুভর ‘সোনা বউ’ আর পড়শীর ‘লজ্জা’ গানগুলোর কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়।
দু’বছর পর হঠাৎ করেই রুমির মনে হলো, আজকাল গানে কণ্ঠ দেওয়া হচ্ছে খুব কম। তাই সব ব্যস্ততা কমিয়ে নিজের সুরে নিজেই কিছু গানে কণ্ঠ দিচ্ছেন। আর এই গানগুলো নিয়েই প্রায় দুবছর বিরতির পর আরফিন রুমি সাজাচ্ছেন তৃতীয় একক অ্যালবাম। এ অ্যালবামটির নাম রাখা হয়েছে ‘ভালোবাসি তোমায়’।
ঈদকে সামনে রেখে সঙ্গীতার ব্যানারে এ অ্যালবামটি আসছে। সদ্য প্রকাশিত হাবিবের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক মূল্যমান দশ লাখ টাকায় রুমীর এই অ্যালবামটির সত্ত্ব কিনে নিয়েছে সংগীতা । জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে অ্যালবামটি শ্রোতাদের হাতে পৌঁছে যাবে। আরফিন রুমীর তৃতীয় এককে মোট গান থাকছে ১০টি। সবগুলো গানের রেকর্ডিং এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে, এখন চলছে মাস্টারিং । বেশির ভাগ গানই রোমান্টিক। গানের কথা লিখেছেন অনুরূপ আইচ, জাহিদ আকবর, সোহেল আরমান , রবিউল ইসলাম, মাশফিক, শফিক তুহিন। গানগুলো হলো- বলো না তুমি কোথায়, প্রিয়তমা মনের একলা ঘরে, রঙ্গিন হাওয়া, সহেনা যাতনা, প্রেমের পথে, প্রতিদিন দেখি তোমায়, ভালোবাসি তোমায়, অচেনা মায়া, শোনো মেয়ে প্রভৃতি। গানগুলোর মধ্যে ৫টি একক ও ৫টি দ্বৈত। দ্বৈত গানগুলোর মধ্যে ২টিতে রুমীর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন ন্যান্সি। একটি করে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন পড়শী, খেয়া ও কলকাতার খ্যাতনামা শিল্পী শুভমিতা।
নিজের তৃতীয় একক প্রসঙ্গে রুমি বলেন, সব ধরনের শ্রোতার কথা মাথায় রেখেই এবারের অ্যালবাম করেছি। তবে বেশিরভাগ গানই রোমান্টিক। এছাড়া সুর আর সঙ্গীতায়োজনে অনেক নতুনত্ব থাকছে। আশা করছি অ্যালবামটি সবার ভাল লাগবে।
চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনায়ও এরই মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন রুমী। এই তো প্রেম, লাল টিপ, মোস্ট ওয়েলকাম, এই তো ভালোবাসা, কমন জেন্ডার এবং ধানমন্ডি আট নাম্বার চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। এ সময়ের তরুণ শ্রোতাদের মুখে মুখে এখন হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ (ছবি: এই তো প্রেম) এবং বাতাসে কান পেতে থাকি (ছবি : এই তো ভালবাসা) গানদুটো সবার মুখে মুখে। এছাড়াও মোস্তফা কামাল রাজের `প্রজাপতি` চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন রুমী।
বাংলাদেশ সময় ১৬১০, জুলাই ০৩, ২০১১