বৃক্ষহীন বেঁচে থাকা কেউ ভাবতে পারে কি? সবুজ ছাড়া এই পৃথিবী কেউ কল্পনা করতে পারে? সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষসহ সমস্ত প্রাণিকেই বৃক্ষ নিশ্চয়তা দিয়েছে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, আশ্রয়, খাদ্যসহ সব প্রয়োজন মেটানোর।
আধুনিক মানুষ ইট কাঠ পাথরের খাঁচায় বন্দী।
সবুজের সমারোহে আমাদের বেঁচে থাকা আর হয়না। তবু ইচ্ছে করলে টুকরো টুকরো সবুজ খুব সহজেই স্থান পেতে পারে আমাদের বাসগৃহ, কর্মস্থলসহ সব জায়গায়। ব্যস্ততার মধ্যে আরাম পেতে পারে দৃষ্টি। নান্দনিকতায়, ঘরসজ্জায় হয়ে উঠতে পারে ব্যতিক্রম রুচির বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা একাত্মতা মিলিয়ে যে শিল্প তাইই বনসাই শিল্প।
বনসাই, ইট বালু আর সিমেন্টের মাঝে এক টুকরো সবুজ । দীর্ঘজীবী কষ্টসহিষ্ণু গাছগুলোকে বিস্ময়করভাবে ক্ষুদ্র আকৃতি প্রদান করা হয়। পাকুর, অশোক, অশ্বল্থ, অর্জুন, দেবদারু, জারুল, তেঁতুল, কৃষ্ণচূড়া, ছাতিম, খেজুর, নিম, বাঁশ, নীলকণ্ঠ, পাইনসহ আরো অনেক ধরনের গাছের বনসাই হতে পারে। ক্ষুদ্র টবে বটের নেমে আসা ঝুরি অবাক করে দর্শনার্থীদের।
বনসাই জাপানী শব্দ যার অর্থ অগভীর পাত্রে গাছের চাষ। অবশ্য সব গাছই বনসাই হয়না। প্রকৃতির বুকে বেড়ে ওঠা মহীরুহের ক্ষুদ্র সংস্করণ বা বামন হয়েও বনসাই আরো নিখুঁত, মার্জিত এবং নান্দনিক ।
কথিত আছে চীন দেশের এক রাজপুরুষ রাজকর্মে বিতৃষ্ণ হয়ে নির্জনে বসবাস শুরু করেন এবং প্রথম বনসাই চর্চা শুরু করেন টবে চন্দ্রমল্লিকার চাষের মাধ্যমে । কামিনী, জুঁই, বাগানবিলাস, রঙ্গন, চেরী, টগর গাছের বনসাইয়ে থোকা থোকা ফুলে চোখ জুড়িয়ে যায় ।
শিল্পী যেমন রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকে বনসাই শিল্পীরাও অগভীর পাত্রে মাটি, গাছ দিয়ে পরিপূর্ণ শিল্প গড়ে তুলে। গাছ যতদিন বেঁচে থাকে শিল্পীকেও নিয়মিত তাতে তুলির ছোঁয়া দিতে হয়। বিদেশি অনেক গাছ যেমন সাইকাস, পেট্রিয়া, ফাইকাস, জুনিপার, এডেনিয়াম, জির, চেরীসহ আরো অনেক গাছ বনসাই করা যায় ।
বাংলাদেশে ধানমন্ডির অর্কিড প্লাজায় রেডিয়েন্ট বনসাই সোসাইটিতে বনসাই প্রশিক্ষণ ও চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে । বনসাই ক্রয়সহ এই সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যও জানা যাবে সেখান থেকে ।
লক্ষ করলে দেখা যায়, পৃথিবীর বেশিরভাগ শিল্পই জড়বস্তু নিয়ে। একমাত্র বনসাইই সম্ভবত জীবন্ত চির অসমাপ্ত শিল্পকর্ম । প্রকৃতির সাথে মানুষের একাত্মতা প্রকাশে বনসাই শিল্প এক প্রাচীন ঐতিহ্য এবং নান্দনিকতার সংমিশ্রণ।
ইমেইল : [email protected]