ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

স্মৃতিময় বুলবুল আহমেদ : কাছের মানুষ ও সহকর্মীদের অনুভূতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১০

বুলবুল আহমেদ নেই। চলে গেছেন তিনি শেষ গন্তব্যে।

তারকা, পরিচালক, প্রযোজক অনেকেরই অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি যুগেরও অবসান ঘটল। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর-এর কাছে তাকে নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন তার কাছের মানুষ ও সহকর্মীরা।


বুলবুল আহমেদ ছিলেন চলচ্চিত্রের সবচেয়ে ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ: নায়করাজ রাজ্জাক

আমাদের সময়ে বুলবুল আহমেদ ছিলেন চলচ্চিত্রের সবচেয়ে ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ। ব্যবহার আর ব্যক্তিত্ব তাকে করেছিল এফডিসির সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন। দেখা হলেই তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলতেন, কী হে নায়কদের রাজা... প্রজাদের খোঁজখবর রাখেন না কেন? তার সেই হাসিমুখ আজ ছবির মতো আমার চোখের সামনে ভাসছে। তার চলে যাওয়া আমাকে আরেকবার মনে করিয়ে দিল, আমার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। তাকে হারিয়ে আমি স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করছি। তার পরিবারের সদস্যদের জানাই সহানুভূতি।

সেরা দেবদাস ছিলেন বুলবুল আহমেদ: কবরী

বুলবুল ভাই নেই, ভাবতেই মনের মধ্যে কেমন একটা হাহাকার করে ওঠে। আমার বড় ভাই ছিলেন তিনি, আপন না হলেও আপনের চেয়ে বেশি। খুব স্নেহ করতেন আমাকে। এবারের সংসদ নির্বাচনের পর দেশের সব শিল্পীর মধ্যে সবার আগে বুলবুল ভাই আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ভারতে ও বাংলাদেশে একাধিকবার দেবদাস ছবি নির্মাণ করা হয়েছে। আমার দেখা সেরা দেবদাস ছিলেন বুলবুল আহমেদ। খুব উঁচু মাপের অভিনেতা ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে বেশ কটি ছবিতে আমি কাজ করেছি। তার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম সবসময়। বুলবুল ভাইয়ের সাথে সাথে আমার অভিনয়টাও ভালো হতো।


তিনি ছিলেন সব ধরনের গুজব-গুঞ্জন বা স্ক্যান্ডালের ঊর্ধ্বে: সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ)

আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন বুলবুল আহমেদ। শহুরে বা গ্রামীণ সব চরিত্রেই তিনি ছিলেন মানানসই। আলমগীর কবিরের ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিতে বুলবুল আহমেদের হৃদয়ছোঁয়া অভিনয় দেখে আমি এতোই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, তাকে অভিনন্দন জানাতে তার বাসা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে যেভাবে আদর-আপ্যায়ন করেছিলেন তা ভুলব না কোনোদিন। কাজের সময় আমরা প্রায়ই হৈচৈ-রাগারাগি করতাম। কিন্তু বুলবুল ভাই রাগারাগি করেছেন, এ কথা এফডিসির কেউ কোনোদিন বলতে পারবেন না। তিনি ছিলেন সব ধরনের গুজব-গুঞ্জন বা স্ক্যান্ডালের উর্র্ধ্বে। আমি বুলবুল আহমেদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।


তার অনবদ্য অভিনয় এখনো চোখে লেগে আছে : চাষী নজরুল ইসলাম

অসাধারণ শিল্পী ছিলেন । সুশিক্ষিত সুস্থধারার পরিপূর্ণ অভিনেতা ছিলেন। বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রে দুজন অভিনেতার নাম বললে তার নাম বলতে হবে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো নতুনদের, অনেক কিছু  শেখার ছিল তার কাছ থেকে। তার অভিনীত দেবদাস, সুভদা, ভালমানুষ এবং সীমানা পেরিয়ে-র মতো বহু চলচ্চিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় এখনো চোখে লেগে আছে। বুলবুল আহমেদের সাথে শত স্মৃতি জমা হয়ে আছে হৃদয়ের মাঝে। শান্ত-সুন্দর মুখটি মন থেকে কোনোভাবেই মোছা যাবে না ।

তিনি ছিলেন অতুলনীয় অভিনেতা : দিলারা জামান

বাংলা চলচ্চিত্রকে অনেক দিয়েছেন তিনি। আশির দশকে করা ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে বুলবুল আহমেদ আমার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার কিছু দিন পর একটা নাটকে আমরা স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করলাম। পরে এটা নিয়ে তাকে অনেক ক্ষেপাতাম। তিনি ছিলেন অতুলনীয় অভিনেতা, ইদানীং পরিচালনায়ও ভালো করছিলেন। আমি দেখেছি সব কাজের প্রতি ছিল তার অসম্ভব আগ্রহ। তার সাথে কাজ করতে পেরেছিলাম, এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের একটা বড় অধ্যায়। এত কাজ করেছেন তবে তাকে কোনো দিন রাগতে দেখিনি ।

সবার সাথে খুব তাড়াতাড়ি মিশতে পারতেন : আবুল হায়াত

অসম্ভব ভালো, হাসিখুশি এবং রসিক মানুষ ছিলেন। সবার সাথে খুব তাড়াতাড়ি মিশতে পারতেন। অভিনয় এবং পরিচালনা দুটি কাজই তিনি খুব গুরুত্বের সাথে করতেন । তার সাথে অনেক কাজ
করেছি। এখন মনে পড়ছে ‘ইডিয়ট’ নাটকের কথা। ভীষণ মেধাবী অভিনেতা ছিলেন বুলবুল আহমেদ।

কাজের সময় খুব মজা করে কাজ করতেন : ডলি জহুর

বুলবুল আহমেদ নেই, তাতে কী, ‘এইসব দিনরাত্রি’সহ অসাধারণ যে কাজগুলো তিনি করে গেছেন তার মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন। কাজের সময় খুব মজা করে কাজ করতেন। খোঁচা দিয়ে কথা বলার অভ্যাস ছিল। তবে তা কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য না, তা ছিল আনন্দের জন্য। আমাদের পারিবারিক সম্পর্কটাও ভালো ছিল। আমার স্বামী অসুস্থ থাকার সময় যেভাবে তিনি সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং আমাকে যে ভরসার কথা শুনিয়ে ছিলেন তা এখনো ভুলতে পারি না ।


পুরো টিমটাকে সবসময় মাতিয়ে রাখতেন : এফ আই মানিক

বুলবুল আহমেদ অভিনয় জীবনের শুরু থেকে স্বাভাবিক এবং সুন্দর কাজ করে আসছেন। আলমগীর কবিরের সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে এবং ধীরে বহে মেঘনা ছবিতে যারা তার অভিনয় দেখেছেন, তারা কেউ তাকে ভুলতে পারবেন না। তার প্রযোজিত এবং পরিচালিত ‘রাজলক্ষ¥ী শ্রীকান্ত’ একটি ব্যবসাসফল এবং ভালো ছবি। কাজের মধ্যে সময়ের গুরুত্ব দিতেন সবসময় আর পুরো টিমটাকে সবসময় মাতিয়ে রাখতেন।  


তিনি যদি নতুন দেবদাসটা দেখে যেতে পারতেন: শাকিব খান

এই তো সেদিন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের ‘রঙিন দেবদাস’-এর শুভ মহরত অনুষ্ঠানে হোটেল শেরাটনের উইন্টার গার্ডেনে শ্রদ্ধেয় বুলবুল আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল । আমি তার পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলাম, তিনি সালাম করতে দিলেন না। আমাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমার বিশ্বাস তুমি দেবদাস চরিত্রে আমার চেয়ে অনেক ভালো করবে। বুলবুল আহমেদের দেবদাস আমি কমপক্ষে ১০ বার দেখেছি। যতোবার দেখেছি ততোবারই আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। জানি না, দেবদাস চরিত্রে কেমন করেছি। আমি নিজেকে সার্থক মনে করতাম, যদি বুলবুল আহমেদ আমাদের করা নতুন দেবদাসটা দেখে যেতে পারতেন।


আমার জীবনের প্রথম শটের প্রথম অভিনেতা : দেবাশীষ বিশ্বাস

খুব বিনম্র একজন মানুষ ছিলেন। আমাকে ছোটবেলা থেকেই খুব স্নেহ করতেন আর সব কাজে উৎসাহ দিতেন। কোনো কাজ খারাপ হলে আমি যেন কষ্ট না পাই, তাই তিনি বলতেন ‘কাজটা আরো ভালো হতে পারতো’। তার সান্নিধ্য খুব ভালো লাগতো। কাজের অভিজ্ঞতা তিনি আমার সাথে ভাগাভাগি করেছেন, যার ফলে তার কাছ থেকে অনেক শিখেছি। বাবার সাথে তিনি অনেক কাজ করেছেন এবং আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্মৃতি হলো আমার প্রথম ছবি ‘শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ’-এ তিনি ছিলেন আমার জীবনের প্রথম শটের প্রথম অভিনেতা।

ছবি : বুলবুল আহমেদ অভিনীত ‘সীমানা পেরিয়ে’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭১৯, জুলাই ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।