গত বিশ বছরে টম ক্রুজ অভিনীত অ্যাকশনধর্মী ছবিগুলোর মধ্যে নাইট অ্যান্ড ডে ছবিটি আমেরিকান বক্স অফিসে চরম ব্যর্থ ছবি হিসেবে আলোচিত হয়েছে, যা সপ্তাহ শেষে আয় করেছে মাত্র ২০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুনের মাসের ২৪ তারিখে আমেরিকায় নাইট অ্যান্ড ডে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই কড়া সমালোচনার শিকার, এমনকি একে পচা টমেটোর সাথে তুলনা করা হয়।
অথচ এই টম ক্রুজই টপ গান, মিশন ইমপসিবল, ভ্যানিলা স্কাই, মাইনোরিটি রিপোর্ট, দি লাস্ট সামুরাই, ওয়ার অব দি ওয়ার্ল্ডসসহ অনেক ব্যবসা-সফল ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন, যে ছবিগুলোতে বক্স অফিস ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করেছে। টম ক্রুজের প্রথম চলচ্চিত্র রিসকি বিজনেস-কে টম ক্রুজের ক্যারিয়ার-মেকার হিসেবে বর্ণনা করা হয় । তার অভিনয়ের স্বীকৃতিও কম নয়, এখন পর্যন্ত তিনটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এবং তিনটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯৯০, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালে পিপল ম্যগাজিন ক্রুজকে বিশ্বের ৫০জন সুন্দরতম মানুষের মধ্যে স্থান দিয়েছে। ১৯৯৫ সালে এমপায়ার ম্যগাজিন তাকে চলচ্চিত্র ইতিহাসে ১০০ জন যৌন-আবেদনময় তারকার মাঝে স্থান দেয়। এমনকি ২০০৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন ও প্রিমিয়ার ম্যগাজিন তাকে বিশ্বের সবচে শক্তিশালী তারকা হিসেবে আখ্যায়িত করে।
প্রযোজক হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা কম নয়, মিশন ইমপসিবল ছবিটি তারই উদাহরণ। ২০০৫ সালে হলিউড সাংবাদিক এডওয়ার্ড জে এপস্টিন দাবি করেন, খুব কমসংখ্যক প্রযোজক আছেন, যিনি টম ক্রুজের মতো বিলিয়ন-ডলার চুক্তির চলচ্চিত্রে সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারেন। ক্রুজ/ওয়াগনার প্রডাকশনস ক্রুজ ও তার অংশীদার ওয়াগনারের ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি।
টম ক্রুজের প্রকৃত নাম থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার চতুর্থ। জন্মেছেন ১৯৬২ সালের ৩ জুলাই নিউ ইয়র্কের সারাকুজে। বাবা প্রকৌশলী, মা শিক্ষিকা। ক্রুজ স্কুলজীবনে অ্যাথলেট হিসেবে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন, আর প্রায় প্রতি রাতেই ফোর হকি খেলতেন।
হেনরি মুনরো মিডল স্কুলে পড়াকালে ক্রুজ নাটকের সাথে জড়িত হন। তার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম আইটি। ১২ বছর বয়সে ক্রুজের মা ক্রুজ ও তার বোন লি অ্যানিকে নিয়ে তার বাবাকে ছেড়ে চলে যান। ক্রুজ প্রথম বিয়ে করেন মিমি রজারসকে। তিন বছর সংসার করার পর তাদের ছাড়াছাড়ি। এরপর ডে’স অব থানডার ছবির সেটে নিকোল কিডম্যানের সাথে পরিচয় এবং বিয়ে। এ সময় ইসাবেলা জেন ও কনর এনটনি নামে দুটি সন্তান দত্তক নেন। কিডম্যানের সাথেও ছাড়াছাড়ি। এরপর পেনেলোপ ক্রুজের সাথে টানা তিন বছর প্রেম করার পর ছাড়াছাড়ি। এরপর ২০০৫-এ কেটি হোমসের সাথে সম্পর্কের শুরু, যার ফসল হিসেবে ক্রুজকে বিয়ে করার আগেই কেটি হোমস একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। অবশেযে ২০০৬-এর ১৮ এপ্রিল দুজনের বিয়ে হয়।
চার্চ অব সায়েন্টেলজির প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং সমর্থনের জন্যে ক্রুজ যথেষ্ট আলোচিত ও বিতর্কিত হয়েছেন। প্রথম স্ত্রী মিমি রোজারসের মাধ্যমেই ক্রুজ সায়েন্টেলজির সাথে জড়িত হন। সায়েন্টেলজিকে ইউরোপে ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রচার চালান। ২০০৫-এ অভিনেত্রী ব্রুক শিল্ডস ড্রাগ নেবার অভিযোগে জনসমে টম ক্রুজের সমালোচনা করেন। পরে ডের স্পাইজেল পত্রিকায় সাৎকার দেবার সময় ক্রুজ বলেন, সায়েন্টেলজিতে বিশ্বের একমাত্র সফল ড্রাগ প্রতিস্থাপন সম্ভব, যাকে ‘নারকনন’ বলে। অনেকেই মনে করেন সায়েন্টেলজি তার ক্যারিয়ারে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
টম ক্রুজের পরবর্তী ছবি ট্রপিক থানডার-এর লেস গ্রোসম্যান চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে। প্যারামাউন্ট এবং এমটিভি ফিল্মস ২৩ জুন ঘোষণা দিয়েছে, তারা একটি ছবি তৈরি করতে যাচ্ছে যেটি টম ক্রুজের ভূমিকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে। টম ক্রুজ এবং ট্রপিক থানডার-এর সহ অভিনেতা এবং পরিচালক বেন স্টিলার ছবিটি প্রযোজনা করছেন। লেস গ্রোসম্যানের জীবনীকে যে কোনো অস্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে মানবজীবনের মহত্ত্ব অর্জনের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী বলে মনে করা হয়। আশা করা হচ্ছে ৪৭ বছর বয়সী এই আমেরিকান অভিনেতা আরও একবার বক্স অফিস হিট ছবি উপহার দিতে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪২০, জুলাই ০৭, ২০১০