কিছুদিন আগে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে কোমরে আঘাত পেয়েছিলেন তারিন। প্রথমে বিষয়টাকে খুব একটা পাত্তা দেননি।
তবে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আবারও অভিনয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারিন। সামনে ঈদ, কাজের চাপটা অনেক বেশি। ছোটপর্দার প্রথমসারির অভিনেত্রী হিসেবে অনেক নির্মাতারই প্রথম পছন্দ তারিন। কিন্তু সবাইকে তো আর শিডিউল দেওয়া সম্ভব নয়। আরো আছে সিরিয়াল নাটকের কাজ। দেশের বাইরে অবস্থান করায় অনেকগুলো সিরিয়ালের কাজ জমা হয়েছিল। তাই তাকে সিলেক্টিভ হতে হয়েছে। আগে প্যান্ডিং সিরিয়ালগুলোর কাজ শেষ করে তারপরই তিনি ঈদের নাটকে কাজ করবেন বলে ঠিক করেছেন। বর্তমানে তারিন জলকণা, হৈ হৈ রৈ রৈ এবং ক্যাফেটেরিয়া সিরিয়ালের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত।
সেই এতটুকু বয়সে তারিন নতুন কুঁড়ির চ্যাম্পিয়ন হয়ে জানান দিয়েছিলেন নিজের সম্ভাবনা। তারপর বড় হয়ে উঠতেই তারার আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে ওঠা। সেই শৈশব থেকে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে অভিনয় জগতে দাপটের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন তিনি। দীর্ঘ ২৪ বছরের শ্রম, সাধনা আর নিষ্ঠায় তার ক্যারিয়ারে যোগ হয়েছে একক নাটক, খ- নাটক, সিরিয়াল, মেগাসিরিয়াল আর টেলিফিল্ম মিলিয়ে ১৮০টির মতো প্রডাকশন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম তারিনের কাছে জানতে চেয়েছিল তার পছন্দের কয়েকটি প্রডাকশন সম্পর্কে। তারিন বললেন, আসলে এতো নাটকের মধ্য থেকে নিজের পছন্দের কাজ বাছাই করা কঠিন। হয়তো অনেক ভালো নাটকের নাম এখন বলতে পারবো না। এ মুহূর্তে মনে পড়া পছন্দের কাজের মধ্যে সংশপ্তক, পাত্রী সংবাদ, অনিন্দিত, নিঃসঙ্গ গাঙচিল, শ্যাওলা, মায়া, নীল মলাট, জোয়ার ভাটা, অন্ধশিকারী, অরণ্যের সুখদুঃখ, মঙ্গলী, বুমেরাং, গাঁওগেরামের কিচ্ছা, চিরকুমার সভা, দেবদাস, করিমুন্নেসা, জ্যোৎস্নাধারা, অতঃপর তাহারা, এই প্রতীক্ষায়, শেষ বিকেলের আলো প্রভৃতির নাম মনে পড়ছে।
তারিন নামে সারা দেশে সুপরিচিত এই অভিনেত্রীর আসল নাম ইয়াসমীন তাজরীন জাহান। ডাক নাম তারিন। বাবা-মা অবশ্য আদর করে ডাকেন তানু বা তান্নি। তারিনের বাবা মোহাম্মদ শাহজাহান একজন ব্যবসায়ী, মা তাহমিনা জাহান গৃহিণী। পাঁচ বোনের মধ্যে তারিন সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। যদিও তারিনের জন্ম আর বড় হয়ে ওঠা সবই ঢাকার লালমাটিয়ায়। লালমাটিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে সমাজকল্যাণে মাস্টার্স করেছেন। পাঁচ ফুট সাড়ে চার ইঞ্চি উচ্চতার এই অভিনেত্রীর প্রিয় পোশাক শাড়ি। পছন্দের রঙ সাদাকালো। প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর তালিকাটা অনেক লম্বা, তাই সেটা বলা থেকে বিরত থাকলেন।
এবার তারিনের সামনে তুলে ধরা হলো আসল প্রসঙ্গ। সম্প্রতি তার কোলকাতা অবস্থানকালে হাওয়ায় গুঞ্জন ওঠেছিল, তারিন নাকি আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। বিয়ের জন্যই তিনি অভিনয় থেকে কিছুদিনের জন্য বিরত আছেন। এই গুঞ্জন সম্পর্কে তারিন নিজেও অবগত বলে জানালেন। কোলকাতায় অবস্থানকালে কাছের মানুষদের কেউ কেউ ফোন করে এ বিষয়ে তার কাছে জানতেও চেয়েছেন। তাদের তারিন যে উত্তর দিয়েছেন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকে সেই একই কথা বললেন। তারিন বললেন, আমি বিয়ের পিঁড়িতে বসলাম আর আমি নিজেই তা জানলাম না। কারা যে এ ধরনের বাজে কথা ছড়ায়, এসব ছড়িয়ে তাদের কী লাভ আমি বুঝি না। তাদের কাছে বোধহয় এখন আমাকে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে, কোলকাতায় আমি গিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য, বিয়ে করার জন্য নয়।
এই কথার রেশ ধরেই এবার তারিনের কাছে প্রশ্ন, তার মানে কি আর কোনোদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন না? এবার তারিনের উত্তর, আমি তো তা বলিনি। সারাটা জীবন একজনের পক্ষে একা কাটানো কঠিন। আমি আর ভুল করতে চাই না। বিয়ের ব্যাপারে আমি এবার পুরোপুরি বাবা-মার ওপর নির্ভর করতে চাই। এ বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
শুধু এই বিষয়ে নয়, তারিন আর কোনো বিষয়েই কথা বলতে চাইলেন না। শুটিংয়ের জন্য মেক-আপ নেয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সুতরাং কী আর করা...!
পাঠকদের জন্য পাদটীকায় উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০০১ সালে তারিন বাবা-মার অমতে পরিচালক আমজাদ হোসেনের ছেলে নির্মাতা-অভিনেতা সোহেল আরমানের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বালির বাঁধের মতো ভেঙে যায় তাদের ঘর। বছর চারেক আগে সোহেল আরমান আবার বিয়ে করেন। কিন্তু তারিনকে নিয়ে শোবিজে অনেক গুঞ্জন শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত আবার বিয়ে করার ব্যাপারে কোনো ঘোষণা দেননি। এ বিষয়ে বরাবরই তিনি নীরবতা অবলম্বন করে চলেছেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৫০, জুলাই ২০১০