বন্ধুত্ব কোথায় নেই? অন্য সব জায়গার মতো শোবিজেও ছড়িয়ে আছে ঝলমলে কিছু বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত। আমাদের মিডিয়ার সেলিব্রিটিদের বন্ধুত্বের মাঝেও আছে আস্থা, নির্ভরতা আর সহমর্মিতা।
নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। যদিও আলী যাকের বয়সে আসাদুজ্জামান নূরের চেয়ে দু বছরের বড়। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এটা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ১৯৭২ সালে আসাদুজ্জামান নূর ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সময় ইন্টারভিউ নিতে যান আলী যাকেরর। সেই সময়ের তরুণ সাংবাদিক নূরকে ভালো লেগে যায় আলী যাকেরের। তিনি তরুণ সাংবাদিককে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বলেন। এভাবেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু। তারা একসঙ্গে মঞ্চ ও টিভিনাটকে কাজ করছেন, ৩৭ বছর ধরে পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন আজকের বিখ্যাত বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক। এখন তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিধি আরো বেড়েছে। এখন আর দীর্ঘ সময় পাশাপাশি থাকা সম্ভব না হলেও যোগাযোগ হয় প্রতিদিন ফোনে। যে কোনো বিষয়ে তারা একে অন্যের পরামর্শ নেন। এই বন্ধুত্ব গড়িয়েছে দুই পরিবারের সদস্যদের মাঝেও।
অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন ও অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি দীর্ঘদিনের বন্ধু। যদিও তাদের কথা-বার্তা আর আচার-ব্যবহার একেবারেই আলাদা। হুমায়ুন ফরীদি কথা বলেন দ্রুতভঙ্গিতে, বেফাঁস কথাও মুখে আটকায় না। আফজাল হোসেন কথা বলেন ধীরস্থির ভঙ্গিমায়, বলেন মেপে মেপে। তাদের একজন বহির্মুখী আর অন্যজন অন্তর্মুখী প্রকৃতির। দুই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই দুই মানুষের মধ্যে দীর্ঘ ৩২ বছরের গাঢ় বন্ধুত্ব। একসঙ্গে তারা ঢাকা থিয়েটার করেছেন একসময়। আফজাল হোসেনই হুমায়ুন ফরীদিকে টিভি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। হুমায়ুন ফরীদি আফজাল হোসেনকে দিয়েছেন মানসিক সঙ্গ ও অনুপ্রেরণা। জীবন-বাস্তবতায় দুই বন্ধুর মধ্যে এখন দেখা-সাক্ষাৎ হয় খুব কম। এমনকি ফোনেও মাসে দু-একবার কথা হয়। তবু তারা দুজনেই মনে করেন, এখনো তাদের বন্ধুত্ব আগের মতোই অটুট । একে অন্যের প্রয়োজনে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত সবসময়।
সঙ্গীতশিল্পী শাকিলা জাফর আর নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা একে অন্যের ভালো বন্ধু। সেই সত্তরের দশকে শিল্পকলা একাডেমীর একটি অনুষ্ঠানে দুজনের পরিচয়। তারপর দুজনই লাক্স-তারকা হওয়ার সুবাদে মুম্বাইতে একটি ক্যাম্পেইনে অংশ নেন। সে সময় শামীম আরা নীপা প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজন হয়ে তার সেবার ভার নেন শাকিলা জাফর। আগে সঙ্গীত পরিবেশনার সময় শাকিলা থাকতেন সাদাসিধে। কিন্তু নীপাই শাকিলাকে শেখান কী করে সেজেগুজে আকর্ষণীয়ভাবে নিজেকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়। সেই সত্তর দশকের এই বন্ধুত্ব আজও টিকে আছে। যদিও ব্যস্ততার কারণে দুই বন্ধুর দেখা-সাক্ষাৎ এখন খুব কম হয়। তবু সুখে-দুখে তারা একে-অন্যের পরামর্শ নেন। যে কোনো সংকট সবার আগে শাকিলা জাফর শেয়ার করেন নীপার সঙ্গে, তেমনি শামীম আরা নীপাও বিপদে-আপদে সবার আগে ছুটে যান শাকিলার কাছেই।
অভিনেত্রী-নির্মাতা আফসানা মিমি আর নাট্যকার-নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী একে-অন্যের ভালো বন্ধু। তাদের বন্ধুত্বের সূচনা সেই দুরন্ত কৈশোরে। একই বিল্ডিংয়ের ওপরের আর নিচের তলায় থেকেছেন তারা দীর্ঘদিন। কেউই তখনও তারকা হয়ে ওঠেননি। শোবিজে আসার পরও তাদের এই বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। পাল্টে যাওয়া বাসা বা নিজ নিজ কাজের ব্যস্ততা দুজনকে দুদিকে ঠেলে দিলেও বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আজও তারা টিকিয়ে রেখেছেন। মাঝেমধ্যে কথা চলে মুঠোফোনে আর মাসে-তিন মাসে কখনো কখনো দেখা হয়। আফসানা মিমি আর চয়নিকা চৌধুরী দেখা হলে আগের মতোই একে-অন্যেকে জড়িয়ে ধরেন। কথাবার্তায় ওঠে আসে আনন্দময় সেই দিনগুলোর স্মৃতি।
শোবিজে এরকম মানিক-জোড় আছেন আরো বেশ কজন। তাদের মধ্যে অভিনয়শিল্পী ডা. এজাজুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদ, সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও গীতিকার আসিফ ইকবাল, অভিনেতা আরমান পারভেজ মুরাদ ও অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, চিত্রপরিচালক ইস্পাহানী ও আরিফ জাহান, চিত্রপরিচালক শাহীন ও সুমন, সঙ্গীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ ও গায়ক খালিদ, নৃত্যশিল্পী নাদিয়া ও লিখনের বন্ধুত্বের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ না করলেই নয়।
বাংলাদেশ সময় : ১৫০০ আগস্ট ০১, ২০২০