ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

রবীন্দ্র নাটকের অভিনেত্রীরা

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১০

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিল্প-সাহিত্যের অন্যসব শাখার মতো নাটলেও রেখে গেছেন আপন মহিমার ছোঁয়া। তার লেখা রক্তকরবী, বিসর্জন, রাজা, গৃহপ্রবেশ, মুক্তধারা, ডাকঘর, মালঞ্চ, চিরকুমার সভা, রাজা ও রানী, শেষ রা, তাসের দেশ, শোধবোধ প্রভৃতি আজও বাংলা নাট্য-সাহিত্যে হয়ে আছে সমকালীন।

শুধু  তা-ই নয়, নাট্যানুরাগী রবীন্দ্রনাথ নিজে নাটক পরিচালনা করতেন এবং অভিনয়ও করতেন। তার লেখা গল্প-উপন্যাসে নাটকীয় উপাদান প্রবল। সৃষ্টি করে গেছেন তিনি অনন্য কিছু চরিত্র। মৃত্যুর প্রায় ৭০ বছর পরও রবীন্দ্রনাথের নাটক আজও যেমন মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে, তেমনি তার লেখা গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ও টিভিনাটক নির্মাণ চলছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা নাটক বা তার গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত কাহিনীচিত্রে নারী চরিত্রে বিভিন্ন সময় অভিনয় করেছেন যারা, আসুন এমন পাঁচ অভিনেত্রীর কথা শুনি।

রবীন্দ্র-চরিত্রে অভিনয়ের সময় ভেতরে আলাদা আবেগ অনুভব করি : রোকেয়া প্রাচী

এবারের রবীন্দ্র মৃতুবার্ষিকীতে এটিএনবাংলার অনুষ্ঠানমালায় প্রচারের তালিকায় থাকা ‘বলাই ও উমা’ নাটকে অভিনয় করেছেন সুঅভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় এ নাটকটি রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে নির্মিত। রোকেয়া প্রাচীর বিপরীতে এ নাটকে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল। নাটকটি প্রসঙ্গে রোকেয়া প্রাচী বলেন, এতে আমি উমা চরিত্রে অভিনয় করেছি। রবীন্দ্র মৃত্যুবার্ষিকীর বিশেষ নাটক আর রবীন্দ্রনাথে সৃষ্টি করা চরিত্র, কাজেই যতোটা সম্ভব যতœসহ নাটকটিতে অভিনয় করতে হয়েছে। অভিনয়ের আগে নিতে হয়েছে যথেষ্ট প্রস্তুতি। কাজটা করার সময় ভেতরে ভেতরে আলাদা আবেগ ও উত্তেজনা অনুভব করি।

রোকেয়া প্রাচী আরো বললেন, অনেকের মতোই রবীন্দ্র-সাহিত্যের সঙ্গে আমার পরিচয় স্কুলজীবনে। তার যে কোনো সাহিত্য পাঠ করার পর নিজের ভিতর আমি গভীর বোধ উপলব্ধি করি। তার তৈরি করা চরিত্রগুলো আমার চোখের সামনে ছবির মতো ভাসে। যদিও এখন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি করা চরিত্রে খুব বেশি অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আমার হয়নি।

রোকেয়া প্রাচী জানান, রবীন্দ্র সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে তাকে একটি নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে। বাংলাভিশন চ্যানেলের বিশেষ প্রামাণ্য গানের অনুষ্ঠান ‘চলনবিল যাত্রী রবীন্দ্রনাথ’ প্রচারিত হবে রোকেয়া প্রাচীর উপস্থাপনায়। রবীন্দ্রনাথ দুই দশকেরও বেশি সময় বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে বসবাস করেছেন। পাবনা ও নাটোর জেলায় বিস্তৃত চলনবিল পাড়ি দেবার সময় তিনি বেশ কিছু গান রচনা করেছিলেন। চলনবিলের সেইসব স্মৃতি রবীন্দ্রনাথ তার বিভিন্ন রচনাতেও উল্লেখ করেছেন। সেই সময় লেখা কিছু গান নিয়ে অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয়েছে চলনবিলে। বিষয়বৈচিত্র্যই অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে রোকেয়া প্রাচীকে আগ্রহী কওে তোলে বলে তিনি জানিয়েছেন।

নিজের ভিতর নন্দিনীর প্রভাব টের পাই : অপি করিম

নন্দিত অভিনেত্রী অপি করিম ছোটবেলায় টিভিতে রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নাটকটি দেখেছিলেন। সেই নাটকটিতে দিলশাদ খানম অভিনয় করেছিলেন নন্দিনী চরিত্রে। এতো ভালো লেগেছিল তার, তবে বড় হয়ে একদিন তিনিই যে নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করবেন সেটা কল্পনাও করেননি সে সময়। হঠাৎ করেই তার সামনে এই স্বপ্নের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এসে যায়। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় মঞ্চে
‘রক্তকরবী’ নাটকের অর্ধশতাধিক প্রদর্শনীতে তিনি অভিনয় করেন। যারা এ নাটকটি দেখেছেন নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, অপি করিম যথার্থই নন্দিনী হয়ে উঠতে পেরেছেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর-এর কাছে নন্দিনী চরিত্রে অভিনয়ের অনুভূতির কথা জানিয়ে অপি করিম বললেন, এ পর্যন্ত আমি যতো চরিত্রে অভিনয় করেছি তার মধ্যে সেরা চরিত্র নন্দিনী। এই চরিত্রটি করার জন্য যতোবার আমি মঞ্চে উঠেছি ততোবারই এটি আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। আমি নন্দিনী চরিত্রটির সঙ্গে একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছি। মনে হয়েছে নন্দিনী আর আমি যেন আলাদা কেউ নই। এ অনুভূতির কথা আসলে মুখে বলে বোঝানো যাবে না।

তিনি আরও বলেন, নিজের ভিতর আমি নন্দিনীর প্রভাব প্রায়ই টের পাই। নন্দিনীর মতো আমিও যেখানে থাকি চারপাশটা আনন্দময় করে তুলতে চাই। কারো মনে কখনো কষ্ট দিতে চাই না। কাছের মানুষদের দুঃসময়ে সহমর্মী হয়ে তাদেও পাশে দাঁড়াতে চাই। যদিও জানি বাস্তবে কখনোই কারো পে নন্দিনী হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। নন্দিনীর মতো চরিত্র শুধু স্বপ্নেই থাকে, আর রবীন্দ্রনাথের মতো মহামানবই এরকম চরিত্র সৃষ্টি করতে পারেন।

রবীন্দ্র নাটকে অভিনয়ের আগে বাড়তি প্রস্তুতি প্রয়োজন : তানভিন সুইটি

অভিনেত্রী ও মডেল তানভিন সুইটি রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে আলাদাভাবে ‘মালঞ্চ’র নাম উল্লেখ করলেন। ২০০৭ সালে নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন খ্যাতিমান নির্মাতা আবু সাইয়ীদ। নাটকটিতে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন বলে সুইটি জানান।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথর মতো বিশ্বমানের সাহিত্যিকের তৈরি করা কোনো চরিত্রে অভিনয়ের েেত্র অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কাজটার প্রতি অনেক মনোযোগ দিতে হয়। রবি ঠাকুরের কাজ করা মানেই অন্যরকম আয়োজন। অভিনয়ের আগে তাই বাড়তি সময় প্রস্তুতি নিতে হয়। রবীন্দ্র-যুগের সময়টা ধরার জন্য পোশাক-আশাক, সাজগোজ সবকিছুতেই নিয়ে আসতে হয় ভিন্ন মাত্রা। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি করা নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের প্রভাব রয়েছে। ক্যামেরার দাঁড়াবার সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে হয়।

সুইটি জানালেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘শেষের কবিতা’ ও ‘মালঞ্চ’ তার দুটি প্রিয় উপন্যাস। আবু সাইয়ীদের পরিচালনায় ‘মালঞ্চ’ নাটকে অভিনয় করে বেশ তৃপ্তি ও আনন্দ পেয়েছিলেন।

লাবণ্য চরিত্রে অভিনয় করতে চাই: বিন্দু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে লাক্স-সুন্দরী আফসান আরা বিন্দুর পরিচয় সেই ছোটবেলায়। পাঠ্যবইতে রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রথম আটলাইন মুখস্ত করার সময় থেকেই বিশ্বকবি সম্পর্কে তার আগ্রহ তৈরি হয়। বিন্দুর বাবা-মা দুজনেরই বই পড়ার অভ্যাস। স্বাভাবিকভাবেই বাসায় ছিল রবীন্দ্রনাথের কিছু বই। একটু বড় হয়ে ঐ বইগুলো পড়ার মাধ্যমে বিন্দু রবীন্দ্র সাহিত্যপাঠ শুরু করেন। সেই যে শুরু হয়েছে এখন পর্যন্ত তা চলছে বলে বিন্দু জানিয়েছেন। মাঝে মাঝে তার নিজের কাছেই অবাক লাগে, একজন মানুষের পে কীভাবে এতোসব রচনা করা সম্ভব। মনে হয় একজীবনে রবীন্দ্রনাথ পাঠ করলেও তা ফুরিয়ে যাবার নয়।

এবারের রবীন্দ্র-মৃত্যুবার্ষিকীতে একুশে টিভিতে প্রচার হবে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প অবলম্বনে বিশেষ নাটক ‘রবিবার’। কাজী জাহিদ পরিচালত এ নাটকে বিন্দু অভিনয় করেছেন রওনক হাসানের বিপরীতে। নাটকটি প্রসঙ্গে বিন্দু বললেন, এ নাটকে আমি অভিনয় করেছি বিভা চরিত্রে। বেশ কিছুদিন আগে এ নাটকের শুটিং শেষ হয়। নাটকটির ভাষা অনেক কঠিন। চলতি ও কথ্য ভাষা হলেও সংলাপগুলো বেশ দীর্ঘ। আমার বিপরীতে এ নাটকে একাধিকবার অভিনেতা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বিন্দু আরো জানালেন, বছরতিনেক আগে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস অবলম্বনে ‘ছিন্নপত্র’ নামের একটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন। অন্যসব কাজের চেয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটকে অভিনয়ের সময় বেশি মনোযোগ দেন এবং চরিত্রটি অনেক যতœ নিয়ে করতে চেষ্টা করেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিন্দু ঊাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেন, আমার প্রিয় উপন্যাস হলো রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’। আমি অনেকবার এ উপন্যাসটি পড়েছি। উপন্যাসটির লাবণ্য চরিত্রটি আমার খুব পছন্দের। যদি কখনো সুযোগ আসে, আমি লাবণ্য চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। কেনো যেন মনে হয়, এই চরিত্রে অন্যদের চেয়ে আমি ভালো অভিনয় করতে পারবো।

রবীন্দ্রনাথের তৈরি চরিত্রে অভিনয় করাটা ভীষণ রোমাঞ্চকর: ফারহা রুমা

অভিনেত্রী ফারাহ রুমাকে এবারের রবীন্দ্র মৃত্যুবার্ষিকীতে দেখা যাবে এনটিভিতে প্রচারের তালিকায় থাকা টেলিফিল্ম ‘শুভদৃষ্টি’-তে। রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেছেন ফেরদৌস হাসান। ফারহা রুমার বিপরীতে এ টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন শাহেদ শরীফ খান।

এ টেলিফিল্মে অভিনয়ের অনুভূতির কথা জানিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে ফারহা রুমা বলেন, রবীন্দ্রনাথের তৈরি করা কোনো চরিত্রে অভিনয় করাটা আমার কাছে ভীষণ রোমাঞ্চকর। কারণ তার সৃষ্টি করা চরিত্রগুলো অমর। আমার পরেও ভবিষ্যতের অনেক অভিনেত্রী হয়তো এ চরিত্রে অভিনয় করবে। এ কথা ভাবলেই মনের ভিতর অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। তিনি আরো বললেন, টেলিফিল্ম ‘শুভদৃষ্টি’-তে অভিনয়ের আগে আমি কমপে বিশবার স্ক্রিপ্টটি আগাগোড়া পড়েছি। আমার করা চরিত্রের আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক, অলংকার, সাজগোজ এসব নিয়ে ভেবেছি। কারণ রবীন্দ্রযুগটা তো আমার অচেনা। তাই সে যুগের একটা অভিনয়ের আগে অবশ্যই সময়টাকে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এমনিতে সাধারণ নাটক হলে এতোসব না ভাবলেও চলে। শুধু আমি একা নই, রবীন্দ্রনাটক করার সময় পুরো ইউনিট কাজটা মনোযোগের সঙ্গে করার চেষ্টা করে।

ফারহা রুমা জানালেন, গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করার মধ্যে আলাদা আনন্দ আছে। ভবিষ্যতে রবীন্দ্রনাটকে আরো অভিনয় করে সেই আনন্দ তিনি আবারও পেতে চান।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩৪৫, আগস্ট ০৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।