বলিউডের কিউট গার্ল সোনালী বেন্দ্রের অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার পরে ভারতীয় নির্মাতারা মিষ্টি হাসির একজন নায়িকাকে খুজছিলেন। মুম্বাইয়ের বাঘা বাঘা নির্মাতারা নেমে পড়েন, একজন সুহাসিনী অভিনেত্রীকে খুঁজে বের করতে।
অনেক খোঁজাখুজির পর বলিউডের মেধাবী নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানসালী পেয়ে গেলেন সেই অমূল্য রতন।
কথায় আছে রতনে রতন চেনে। সেটা পুরোপুরি সত্য হল যখন বানসালী অনিল কাপুরের কন্যা সোনম কাপুরকে আবিষ্কার করলেন। মনকড়া সৌন্দর্য্য সাথে ভুবন ভোলানো হাসির সোনম কাপুর বানসালির কাছে এসেছিলেন তার সহকারী হিসেবে ক্যামেরার পিছনে কাজ করতে, অর্থাৎ পরিচালক হবার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু শরীরের প্রতিটি শিরায় যার অভিনয়ের রক্ত, যার জন্ম বিখ্যাত কাপুর পরিবারে সে কেন পরিচালক হবে। অভিনয়টাই হওয়া উচিত তার আসল অবলম্বন। বানসালি তাকে বললেন, পর্দার পেছনে তোমাকে মানাবে না। তোমার উচিত পর্দার সামনে দাঁড়ানো। সঞ্জয় লীলার অভিনয়ের প্রস্তাব এড়ানো তো অনিল কাপুরের পক্ষেও সম্ভব নয়, আর সোনম তো তার কন্যা।
বলিউডের সনি পিকচার্সের প্রযোজনায় ছবি ‘সাওয়ারিয়া’-তে নায়িকা হয়ে আলো-ছায়ার জগতে পা রাখলেন সোনম কাপুর। ছবিটি সেরকম ব্যবসাসফল না হলেও সোনমের সহজ সরল ও নিষ্পাপ হাসি মাখা মুখটি দর্শকদেও হৃদয়ে ভালভাবেই দোলা দিয়েছিল। ছবিতে ভাল অভিনয় করায় সমালোচকদের প্রসংশা পান। অভিনয়টা ভালো না করার কোন কারণ অবশ্য ছিল না। কেননা সোনমের বেড়ে উঠেছেন বিখ্যাত সব অভিনয়শিল্পীর সংস্পর্শে। সোনমের বাবা অনিল কাপুর, চাচা প্রযোজক বনি কাপুর, সঞ্জয় কাপুর, চাচী শ্রীদেবী, ফুফা প্রযোজক সন্দীপ মারাগ এবং লতায়-পাতায় আত্মীয়-স্বজনের নাম ধরলে তালিকাটা অনেক লম্বা হয়ে যাবে।
শুরুতে কোনো কোনো নিন্দুক বাঁকা চোখে বলেছিলেন, পারিবারিক সাপোর্ট আর স্বজনপ্রীতির কারণেই নাকি সোনম ভাল ভাল নির্মাতাদের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে ‘দিল্লি-সিক্স’ ছবিটির পরে সবাই একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, কিসমত কানেকশন নয় সোনমের বড় গুণ গ্ল্যামার আর অভিনয়ের স্বত:স্ফুর্ততা। এ কথাটির যথার্থতা আরেকবার প্রমান করতেই সোনম সম্প্রতি বলিউডের দর্শকদের উপহার দিয়েছেন সুপারহিট ছবি ‘আই হেট লাভ স্টোরিজ’। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে সোনম কাপুরের প্রাণবন্ত পারফর্মেন্স নজর কেড়েছে সবার।
ফাটাফাটি ব্যবসা করে এটি বছরের অন্যতম সেরা সুপারহিট ছবির তকমা লাগিয়েছে। সোনম কাপুর তার অভিনয় জীবনের চতুর্থ বছরে এসে প্রথমবারের বক্স-অফিস কাপাঁনো ছবির দেখা পেলেন।
‘আই হেট লাভ স্টোরিজ’ এর গল্পের প্রয়োজনে সোনম বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীর আচার-আচরণ অনুকরণ করতে হয়েছে। প্রিটি ওম্যান ছবির জুলিয়া রবার্টস, ফ্রেঞ্চ কিস এর মেগ রায়ান, কুচকুচ হোতা হ্যায় এর কাজল ও রানী, দিল ওয়্যালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের কাজল, এমনকি শ্রীদেবী, মাধুরী আর প্রীতি জিনতার রোমান্টিক কমেডি ছবিও অনুসরন করেছেন সোনম। অবশ্য সোনম নিজের প্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন বলিউডের ওয়াহিদা রহমান, নার্গিস, মাধুরি এবং হলিউডের মেরিল স্ট্রিপ ও অ্যাঞ্জোলিনা জোলির নাম। তবে অভিনেতাদের মধ্যে তিনি শুধু তার বাবা অনিল কাপুরেরই ভক্ত।
‘আই হেট লাভ স্টোরিজ’ ছবির মাধ্যমে বলিউড ইন্ড্রাস্টিতে সোনম কাপুরের অগ্রযাত্রায় অভিভূত হয়ে কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, এই মিস্টি হাসির মেয়েটি বর্তমান সময়ের অন্যতম মেধাবী অভিনেত্রী। তার মধ্যে আছে অপার সম্ভাবনা। অভিনয়ে সিরিয়াস থাকলে তিনি কয়েক বছরের মধ্যেই বলিউডে রাজত্ব শুরু করবেন এবং দর্শকের মনে টিকে থাকবেন চিরকাল।
গত ৬ আগষ্ট মুক্তি পেয়েছে সোনম অভিনীত ছবি ‘আয়েশা’। এখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। ছবিটি নানা কারণে বেশ আলোচিত। এ ছবির মাধ্যমেই প্রযোজক হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে অনিল কাপুরের কনিষ্ঠ কন্যা রিহা কাপুরের। শোনা যাচ্ছে সোনমের প্রতিটি বিষয়ের ভাল মন্দ দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন রিহা। ‘আয়েশা’ ছবিতে সোনমকে দেখা যাবে সমাজে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত তরুণীর চরিত্রে, যিনি প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে এগিয়ে চলছেন। সবাই আশা করছেন মিষ্টি মুখায়ব ও সাবলীল অভিনয় দিয়ে আয়েশারূপী সোনম এবারও কুড়াবেন দর্শকদের প্রশংসা ।
জেন অস্টিনের ইম্মা উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে ‘আয়েশা’ ছবিটি নির্মাণ করেছেন রাজশ্রী ওঝা। তিনি সোনমের অভিনয়ের প্রশংসা করে বলেন, সোনম আয়েশা ছবিতে নিজেকে চরিত্রের সাথে পুরোপুরিভাবে মিলিয়ে নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস দর্শকরা আয়েশাকে খুব ভালভাবেই নিবেন। ‘আয়েশা’ ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন অভয় দেয়ল, ইরা দেবী, অরুনন্দী সিং, অমৃতা পুরী ও আরো অনেকে।
কারিশমা-কারিনা দুই বোনের পরে বলিউডে অনেকবছরের ব্যবধানে আগমন ঘটল ভগ্নি জুটি সোনম ও রিহা কাপুরের। কারিশমার সহায়তার কারণেই আজ কারিনা কাপুর বলিউডে প্রতিষ্ঠিত। সোনম যেহেতু একজন কারিশমাকে পেয়ে গেছেন এবং সেই সাথে তার আছে সৌন্দর্য ও অভিনয় দতা। এই তিনে মিলে সোনমের এখন শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।