ঈদের প্রায় দু মাস আগেই বিটিভিসহ স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর প্রস্তুতি শুরু হয় ঈদের বিশেষ আয়োজন নিয়ে। চ্যানেলগুলোতে ঈদের অনুষ্ঠান প্রচার হবে ছয় থেকে আট দিনব্যাপী।
নির্মাতা ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে সর্বাধিক নাটকে অভিনয় করছেন মোশাররফ করিম, প্রভা, বিন্দু, চঞ্চল চৌধুরী, তিশা, হাসান মাসুদ প্রমুখ। নির্মাতাদের মধ্যে সালাউদ্দিন লাভলু, চয়নিকা চৌধুরী, রেদোয়ান রনী, অনিমেষ আইচ, সুমন আনোয়ার, দীপংকর দীপেন প্রমুখের একাধিক নাটক বিভিন্ন চ্যানেলের ঈদের অনুষ্ঠানমালায় প্রচারিত হবে।
ঈদে কে কী করছেন, তা জানার জন্য বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আসুন, শুনি তাদের কথা।
অন্যদের তোপের মুখে পড়তে চাই না : মোশাররফ করিম
ছোটপর্দার এই সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। তার কাছে ঈদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের নাটকের কথা বলে এ পর্যন্ত প্রায় এক ডজন নির্মাতা আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। কয়েকটার নাম আর চরিত্রের কথা মনে করতে পারব, বেশির ভাগই পারব না। দু-একটার নাম বলে অন্যদের তোপের মুখে পড়তে চাই না। তিনি আরো বলেন, সত্যি স্বীকার না করে পারছি না যে, আমি নিজেই জানি না কোন নাটক কোন চ্যানেলে প্রচার হবে। এবার আর আগের মিলিয়ে আমার কমপক্ষে ১৫-১৬টা নাটক প্রচার হবে। আমার অভিনয়ের নাটকগুলো আমি দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু গত ঈদে একই সময় দু-তিনটি চ্যানেলে নাটক প্রচার হওয়ায় মুশকিলে পড়ে গেছি, কোনটি ছেড়ে কোনটি দেখব। এবারও এরকম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
আরো কাজ করার সম্ভাবনা আছে : চঞ্চল চৌধুরী
ঈদে কয়টি নাটকে আপনাকে দেখা যাবে জানতে চাইলে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, আসলে এটা এখনও ঠিকঠাক বলতে পারব না। কারণ এখন পর্যন্ত এবার ঈদে ২০টির মতো নাটকে কাজ করেছি। আরো কাজ করার সম্ভাবনা আছে। তিনি আরো বললেন, ঈদে বিভিন্ন রকম চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। একটার সাথে অন্যটার কোনো মিল নাই, না গল্পে না চরিত্রে। উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম জানতে চাইলে চঞ্চল চৌধুরী বললেন, নাটকগুলো নাম মনে নেই অধিকাংশই। এর মধ্যে সাগর জাহানের রচনা এবং সকাল আহমেদের পরিচালনায় করেছি ‘দৈ গোপাল’। এখানে আমার সহঅভিনেতা ছিলেন হুমায়রা হিমু । ‘নকশি কাঁথার মাঠ’-এ কাজ করেছি। এটির পরিচালক রাজীব। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ফারহানা মিলি। সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় করেছি ৪টি নাটক ‘তিন গেদা’, ‘সার্ভিস হোল্ডার’, ‘মহর শেখ’। আরেকটির নাম ঠিক হয়নি। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘রুস্তম’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছি। অভিনয় করেছি মামুনুর রশীদের ‘ঠেঠারো’ নামের একটি মজার নাটকে। আরো অভিনয় করেছি দীপংকর দীপনের ‘ছবিওয়ালা’ আর অরন্য আনোয়ারের ‘অ্যাওয়ার্ড’ নাটকে। এছাড়াও রোকেয়া প্রাচী এবং গোলাম সারোয়ার দোদুলের একটি করে নাটকে কাজ করেছি। আমার অধিকাংশ নাটকে ছিল প্রভা, খুশি এবং মিম।
অন্যবারের তুলনায় এবার আমাকে বেশি দেখা যাবে : প্রভা
সাদিয়া জাহান প্রভার কাছে তার ঈদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, অন্যবারের তুলনায় এবার ঈদের নাটকে আমাকে বেশি দেখা যাবে। প্রভা আরো বললেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ১২-১৩টি নাটকে অভিনয় করছি। তাছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় যেসব নাটকে কাজ করেছি তার অনেকগুলোই ঈদে প্রচার হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা। হিসাব করে দেখলাম, সব মিলিয়ে আমার প্রায় ২০টি নাটক প্রচার হতে পারে এই ঈদে। প্রভার কাছে উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু-চারটা ছাড়া বাকিগুলোর নাম বলতে পারবো না। তবে বেশ কিছু মজার চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। আমার করা নাটকগুলোর সব আমি নিজেই দেখতে পারব না।
প্রতি ঈদেই কাজের চাপ বেড়ে যায় : তিশা
উত্তরায় মোস্তফা কামাল রাজের ‘গ্রাজুয়েট’ নাটকের শুটিংয়ে অংশ নেবার সময় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-র সঙ্গে কথা বললেন তিশা। তিনি বলেন, সারা বছর কাজ করলেও প্রতি ঈদে কাজের চাপ বেড়ে যায়। সারা বছর ধরে যাদের কাজ করি, তারা ঈদের প্রডাকশনেও আমাকে আশা করে। কাজেই চাপটা নিতে হয়। ঈদে কী কী নাটতে অভিনয় করছেন জানতে চাইলে তিশা বললেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের জন্য অনেক নাটকে কাজ করেছি । দুঃখের সাথে বলতে হয় কোনো নাটকের নাম মনে নেই। তবে পরিচালকদের মধ্যে অনেকের নামই মনে আছে। সকাল আহমেদ, রুমেল, হিমেল, আলভি আহমেদ ও গোলাম সারোয়ার দোদুলের একাধিক নাটকে আমি অভিনয় করেছি। সহ-অভিনেতাদের মধ্যে আছেন জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, জিতু আহসান, মোশাররফ করিম এবং সজলের নাম। যাদের নাটকে এবং যাদের সাথে কাজ করেছি তাদের অনেকের নাম ভুলে গেছি তার জন্য আমি দুঃখিত ও লজ্জিত।
বিচিত্র চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে : বিন্দু
লাক্স সুন্দরী আফসান আরা বিন্দুকে এবার ঈদে তুলনামূলক বেশি নাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে বিন্দু বলেন, আমি ধারাবাহিক নাটকে খুব একটা কাজ করিনি। একপবের্র নাটক আর টেলিফিল্মে বেশি অভিনয় করেছি। সারা বছরের করা কাজগুলোর বেশিরভাগই এবারের ঈদে প্রচার হবে। এ পর্যন্ত ঈদের বিশেষ কাজ করেছি ৬-৭টির মতো। শুরু হবে আরো কয়েকটির কাজ । সব মিলিয়ে ১৫-১৬টা নাটকে হয়তো আমাকে দেখা যাবে। তিনি আরো বলেন, এবার নানারকম চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে।
ঈদের কাজ নিয়ে দু মাস ধরে ব্যস্ত : মীর সাব্বির
অভিনেতা মীর সাব্বির জানালেন, ঈদের কাজ নিয়ে গত দু মাস ধরে ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে তার। তিনি বলেন, ঈদের জন্য প্রচুর কাজ করেছি । অধিকাংশ নাটকের নামই মনে নেই। ঈদের জন্য নিজের করা কয়েকটি ভালো নাটকের নাম জানতে চাইলে তিনি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় ‘সাহেব চান্দের ঈদভোজন’, সুমন আনোয়ারের ‘জোড়া শালিক’, মোহন খানের ‘আই লাভ ইউ তিন কারণে’, নূরুল আলম আতিকের ‘ডালিম কুমার’, সৌম্য নজরুলের ‘টাউট’ প্রভৃতি নাটকের নাম উল্লেখ করলেন। মীর সাব্বির আরো বললেন, এছাড়া সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখা ও জাহিদ বিপ্লবের পরিচালনায় একটি নাটকে কাজ করেছি। হুমায়ূন আহমেদ, শাহরিয়ার নাজিম জয়, নিয়ামূল এবং ফজলুর রহমানের পরিচালনায় প্রত্যেকের একটি করে নাটকে কাজ করেছি । এছাড়া কায়সার আহমেদের ঈদের ৫ পর্বের এক ধারাবাহিকে কাজ করেছি। আমার লেখা এবং পরিচালনায় ‘কাঁচা গাব পাকা গাব’ নাটকেও অভিনয় করেছি। কোনো চরিত্র ভালো লাগার পরই সে চরিত্রে কাজ করি। তাই বলবো সব নাটকের চরিত্রই ভালো লেগেছে।
সঠিক সংখ্যা বলতে পারবো না : ফারহানা মিলি
এবার ঈদের নাটক নিয়ে ফারহানা মিলি অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত। তিনি বলেন, ঈদের অনেক নাটকে কাজ করেছি। সঠিক সংখ্যা বলতে পারবো না। কয়েকটি নাটকের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে মনে পড়ছে সুমন আনোয়ারের রচনা ও পরিচালনায় ‘বিনে সুতার মালা’ নাটকটির কথা। এখানে আমার বিপরীতে ছিলেন হিল্লোল। রওনক হাসানের লেখা এবং সাজ্জাদ সুমনের পরিচালনায় ‘চিলেকোঠার স্বপ্ন’ নামের একটি নাটকে সেদিন কাজ করলাম। এতে রওনক হাসান ও ইরেশ যাকের অভিনয় করেছেন। ‘বউ শ্বশুড়ির থেরাপি’ নামের একটি কাজ করেছি এটির লিখেছেন উজ্জ্বল এবং পরিচালনা করেছেন তারেকুল ইসলাম। এখানে শ্বাশুড়ি ছিলেন ওয়হিদা মল্লিক জলি। রাসুর পরিচালনায় একটি কাজ করেছি নাম ‘এ জার্নি বাই মাইক্রোবাস’। এখানে আমার সাথে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। শুভ এবং উজ্জ্বলের পরিচালনায় ‘মন্দ বিশ্বাস’ নামে একটি কাজ করেছি এনটিভির জন্য। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ এ কাজ করেছি এটির পরিচালক রাজীব। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। নোমান রবীনের ‘পাংখা’ নাটকে কাজ করেছি; এটি লিখেছেন অনুরূপ আইচ। এখানে আমি একজন বস্তির মেয়ে চরিত্রে অভিনয় করি, যে বিউটি কুইন হয়। এখানে মাহি বি চৌধুরীও অভিনয় করেছেন। এ নাটকটিতে কাজ করে ভালো লেগেছে।
কোনটা অনইয়ার হবে জানি না : হোমায়রা হিমু
এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উত্তরায় দীপংকর দীপনের ঈদের নাটক ‘আজব টিভি’র শুটিং করছেন। ঈদের কাজের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকগুলো কাজ করেছি। এর মধ্যে আছে সাইদুল আনাম টুটুলের ‘ভাঙ্গা মেলা’। এতে আমার বিপরীতে আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ। শাহীন কবির টুটুলের হাসির নাটক ‘ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া’তে অভিনয় করলাম। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন হাসান মাসুদ । সাগর জাহানের রচনা এবং সকাল আহমেদের পরিচালনায় করেছি ‘দৈ গোপাল’। এখানে আমার বিপরীতে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। এছাড়া জুয়েল রানার ‘মোবারকের লাভ স্টোরি’, এস আই সুমনের ‘ভালবাসা ৭. ২’, এস কিউ পিটারের ‘ফুরুত আলী’, শাহরিয়ার শুভর ‘ছায়াসঙ্গী’তে কাজ করেছি। হোমায়রা হিমু আরো বললেন, ঈদের জন্য অনেক নাটকেই কাজ করেছি, তবে কোনটা অনইয়ার হবে কোনটা হবে না, জানি না। ভালো লাগা চরিত্রের মধ্যে সাইদুল আনাম টুটুলের ‘ভাঙ্গা মেলা’র মেয়ে বাউলের চরিত্রটি ভালো লেগেছে। ‘দৈ গোপাল’র গ্রামের হিন্দু মেয়ের চরিত্রটিও ভালো লেগেছে, যে একজন দৈ ওয়ালাকে পছন্দ করে। কাজ করার সময় একদিন সারা রাত আমরা কুষ্টিয়ার নদীর পাড়ে কাটিয়েছি। এই নাটকের কাজ করতে খুব ভালো লেগেছিল।
আমাদের এখানে শিল্পীসংখ্যা সীমিত : রওনক হাসান
অভিনেতা রওনক হাসান জানালেন, ঈদের জন্য ১০-১২টা নাটকে কাজ করছেন। এর মধ্যে কিছু নাটকের নাম মনে আছে, কিছু মনে নেই। তিনি বলেন, জুলফিকার রাসেলের লেখা এবং সুমন আনোয়ারের ঈদের বিশেষ নাটক পরিচালনায় ‘সবুজ দওয়াই’য়ে কাজ করলাম। অভিনয় করলাম দীপংকর দীপনের ‘আজব টিভি’ নাটকে। এতে আমার বিপরীতে ছিলেন হোমায়রা হিমু। কৌশিক শংকর দাশের ‘প্রতারক’ নাটকে কাজ করেছি । এখানে আমার বিপরীতে ছিল তিন্নি। হাসান দৌলা রনির একটি কাজ করেছি। নাটকের নাম মনে নেই। এখানে আমার বিপরীতে ছিল নাদিয়া। ‘হেড মুন্ডু ঊর্ধ্ব পথ’ নামে একটি নাটকে কাজ করেছি এখানেও ছিল নাদিয়া। আমার লেখা এবং সাজ্জাদ সুমনের পরিচালনায় করেছি ‘ চিলে কোঠার স্বপ্ন’। মেজবাহ আহমেদ সুমনের ‘সাইজ’ নামের একটি নাটকে আমার সাথে অভিনয় করেছে স্বাগতা এবং রাহা। রওনক বলেন, আমাদের এখানে শিল্পীসংখ্যা সীমিত। তাই যারা কাজ করছি তাড়ের ঈদের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ব্যস্ততা চলবে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৩৮, আগস্ট ১২, ২০১০