যদি বাংলাদেশে সেরা মডেলদের কোনো তালিকা করা হয়, সেখানে সাদিয়া ইসলাম মৌ-এর নাম থাকবে শীর্ষসারিতে। দীর্ঘদিন শোবিজ থেকে দূরে থাকার পর সম্পতি একটি গুড়ো দুধের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মডেলিংয়ে ফিরেছেন তিনি।
খাঁটি সোনা যতো পুরোনোই হোক এর রঙ কখনো মলিন হয় না। আমাদের শোবিজে এরকম হাতেগোনা কিছু খাঁটি সোনার মধ্যে অন্যতম হলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ। নব্বুইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে যিনি ঝড় তুলেছিলেন মিডিয়ায়। মডেলিংয়ে যোগ করেছিলেন নতুন দ্যুতি। টিভিতে প্যাকেজ নাটক প্রচারের শুরুর দিকে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন চমক। নৃত্যশিল্পকে জনপ্রিয় করতেও রেখেছেন অবদান। তাকে ঘিরে দেশ জুড়ে যখন তুমুল ক্রেজ, ঠিক সেই সময় টুপ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েন মৌ। ভালোবেসে ঘর বাঁধেন জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের সঙ্গে। বিয়ের পরও সাদিয়া ইসলাম মৌকে মডেলিং করতে দেখা গেছে। অভিনয় করেছেন টিভি নাটকে। নৃত্য পরিবেশন করেছেন স্টেজে ও টিভি-অনুষ্ঠানে। মিলেনিয়ামে পদার্পণের সময় থেকে একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে নেন। একটা সময় চলে যান পুরোপুরি পর্দার অন্তরালে। এ সময় অবশ্য জাহিদ-মৌ দম্পতির কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে সন্তান পুষ্পিতা। বহু নাটক আর মডেলিংয়ের অফার থাকলেও প্রায় ৬/৭ বছর সাড়া দেন নি মৌ। গত দু’তিন বছর ধরে বিভিন্ন চ্যানেলে ঈদের প্রোগ্রামে কয়েকটা নাচের অনুষ্ঠানে তাকে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা যায়। গত বছর ঈদে এটিএন বাংলায় প্রচার হয় সাদিয়া ইসলাম মৌ-এর পরিচালনায় বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান। এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী-মডেলদের পাশাপাশি মৌ নিজেও তাতে নৃত্য পরিবেশন করেন। এভাবেই তিনি মিডিয়ায় ফেরার ইঙ্গিত রাখেন। যা স্পষ্ট হয়ে দীর্ঘদিন পর বছরের শুরুতে একটা গুড়ো দুধের বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার পর।
সাদিয়া ইসলাম মৌ মিডিয়ার বাইরে থাকার সময় বেশ খানিকটা মুটিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ছিপছিপে মেয়ে মৌকে যারা এসময় দেখেছেন তার চমকে উঠেছেন। মৌ আবারও সবাইকে চমকে দিয়ে শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন বাড়তি মেদ। হয়ে উঠেছেন আবারও স্লিম। শোবিজে ফিরে আসার জন্য বলা যায় তাকে বেশ খাটুনিই করতে হয়েছে। দীর্ঘদিনের বিরতির পর আবার পুরোপুরি মিডিয়ায় ফিরে আসা প্রসঙ্গে সাদিয়া ইসলাম মৌ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমি কখনোই বলি নি যে মিডিয়া থেকে বিদায় নিয়েছি। মাঝখানে কিছুদিন বিরতি নিয়েছি সংসারের প্রয়োজনে। গুছিয়ে নেবার পরই আবার কাজ শুরু করলাম। তবে কাজের ক্ষেত্রে আমি আগেও সিলেক্টিভ ছিলাম। এখনো সিলেক্টিভ ভাবেই কাজ করবো। ভালো কাজ না হলে আগেও করি নি, এখনো করবো না।
এবারের ঈদে টিভিপর্দায় সাদিয়া ইসলাম মৌ আসছেন একাধিক পরিচয়ে। দীর্ঘদিন পর নোবেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন তিনি। অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ পরিচালিত ঈদের বিশেষ টেলিফিল্ম ‘অল দ্য বেস্ট’-এ দেখা যাবে তাদের। টেলিফিল্মটি প্রচার হবে চ্যানেল আইয়ের ঈদের অনুষ্ঠান মালায়। এতে কাজ করা সম্পর্কে মৌ বললেন, কাজটি করে বেশ ভালো লাগছে। একটি শিশুর হারিয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে টেলিফিল্মটির কাহিনী এগিয়ে যায়। এতে আমাকে আর নোবেলকে দেখা যাবে শিশুটির বাবা-মায়ের ভূমিকায়। নোবেল আর আমি দুজনেই বাস্তবজীবনে বাবা-মা। সন্তান হারানো বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে আমরা দুজনেই খুব তৃপ্তি পেয়েছি। আশা করি কাজটি ভালো লাগবে দর্শকদের।
আগে একাধিক নাচের অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেও এবারই প্রথম সাদিয়া ইসলাম মৌ টিভিনাটক পরিচালনা করেছেন। আলী ইমরান রচিত নাটকটির নাম এখনো চুড়ান্ত হয় নি। মৌ-এর পরিচালনায় প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করছেন হুমায়ূন ফরীদি, জাহিদ হাসান ও আফসানা মিমি। নাটকটি প্রসঙ্গে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-কে মৌ বলেন, আসলে নাটক পরিচালনা করবো এরকম কোনো প্রস্তুতি আমার ছিল না। প্রস্তাবটা আসে দেশ টিভি থেকে। ভাবলাম, মিডিয়া যখন আবার কাজ শুরু করেছি চেষ্টা করে দেখা যাক। জাহিদ হাসান এসময় অনুপ্রাণিত করেছেন। ঈদের জন্য নাটক তাই একটি হাসির নাটক বেছে নিয়েছি। নাটকটির প্রধান চরিত্রে হুমায়ূন ফরীদি, জাহিদ হাসান আর আফসানা মিমিকে বেছে নিয়েছি গল্পের প্রয়োজনেই। ১৬ আগস্ট থেকে নাটকটির শুটিং শুরু করতে যাচ্ছি। প্রথম নাটক বলেই হয়তো কাজটা নিয়ে একধরণের টেনশন বোধ করছি। তবে নেপথ্যের কাজ আমি সবসময় উপভোগ করি। নাটক পরিচালনার কাজটিও উপভোগ করবো বলে আশা করছি।
মৌকে এবার ঈদে এনটিভির একটি বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠানেও নাচ পরিবেশন করতে দেখা যাবে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে সাদিয়া ইসলাম মৌ শোবিজে ফিরে আসছেন বেশ জোরালোভাবেই। সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা মৌ-এর ফ্যানদের জন্য অবশ্যই সেটা আনন্দের সংবাদ।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯৩০, আগস্ট ১৪, ২০১০