হতে চেয়েছিলেন ব্ল্যাক ম্যাডোনা। তাই বলে মাত্র ১৯ বছর বয়সে এই পুঁচকে মেয়েটাই হঠাৎ করে এমন লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে দেবে কে ভাবতে পেরেছিল ? ভাবতে অবশ্য কেউই পারেনি।
২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় রিহানার প্রথম অ্যালবাম ‘মিউজিক অব দ্য সান’। যা সারা বিশ্বে এক মিলিয়ন কপি বিক্রির রেকর্ড ভাঙে। এই অ্যালবামের প্রথম গানটি ‘পন ডে রিপে...’ ইউকে এবং ইউএসএর ২য় টপচার্টে থাকায় রিহানার রাতারাতি তারকা বনে যান রিহানা। এমনকি এ গানটি বিখ্যাত বিলবোর্ড হিট ১০০ গানের মধ্যে স্থান পায়। প্রথম অ্যালবামের সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই রিহানা গোয়েন স্টেফিনির চলচ্চিত্র ‘ব্রিং ইট অন’ ছবিতে অভিনয় করেন।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার ২০০৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘এ গার্ল লাইক মি’। যা নিয়ে আসে রিহানার জন্য সাফল্যের নতুন বার্তা। কারণ এই অ্যালবামের ‘এসওএস ’ গানটি ইউএস টপ চার্টের এক নম্বর স্থানে উঠে আসে। শুধু তাই নয় এই অ্যালবামের ‘আনফেইথফুল’ ও ‘ব্রেক ইট অফ’ গানটি স্থান করে নেয় বিলবোর্ড টপ চার্টের সেরা পাঁচে। সেই সুবাদে তাকে নিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে ট্যুর শুরু হয়। ঠিক তার পরের বছর ২০০৭ সালে তৃতীয় অ্যালবাম ‘গুড গার্ল গন ব্যাড’ নিয়ে হাজির হন রিহানা। এই অ্যালবামও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। কারণ এই অ্যালবামে তার সঙ্গে ছিল হিপ হপ মেগাস্টার জে জি নে ইয়ো টিম্বার ল্যান্ড এবং স্টারগেটের মতো তারকার গান। প্রতিবারের মত এই অ্যালবামটিও রিহানার তারকাখ্যাতি একধাপ বাড়িয়ে দেয়। এই অ্যালবামও ইউকের এক নম্বর এবং ইউএসএর দ্নুম্বর টপচার্টে উঠে আসে। এরপর শুরু হয় তাকে নিয়ে আয়োজকদের টানাটানি।
ইউরোপ-এশিয়া মিলে সর্বমোট ৭৯ টি ট্যুর করেন রিহানা। ট্যুর শেষ করতে লেগে যায় পুরো দুই বছর। ২০০৯ সালে আবার পুরোদমে কাজের মাধ্যমে বের করেন সর্বশেষ অ্যালবাম ‘রেটেড আর’। আর এই অ্যালবামটি সারা বিশ্বে প্রায় তিন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত শ্বেতাঙ্গ হিপহপ সঙ্গীতশিল্পী এমিনেম ফিচারিং রিহানার গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘লাভ দ্য ওয়ে ইউ লাই’ নামক এই গানটি গত দুই সপ্তাহ ধরে বিলবোর্ডের টপ চার্টেও র্শীষে স্থানে রয়েছে।
যদিও ছেলেবেলাটা খুব আরামের ছিল না রিহানার। বাবা ছিলেন মদ্যপ ও জুয়াড়ি। একটা সময় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় মা-বাবার। এ ঘটনা তার ছোটবেলাকে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, তিনি জীবনে প্রথমবার যে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ের মালা পরেছিলেন সেটা ছিল একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা। সেবার বার্বাডোজের স্থানীয় এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। ম্যাডোনা হতে চাইলেও গায়িকা মারায়া ক্যারিকে আইডল মানেন রিহানা। মারায়াকে অনুসরণ করেই বড় হয়েছেন তিনি। এমনকি স্কুলের ট্যালেন্ট শোতে তার হিরো গানটি গেয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। এ ছাড়া তার পছন্দের তালিকায় আছেন বিয়ন্স, সিলন ডিয়ন, ডেসটিনি’স চাইল্ড, হুইটনি হাউসটন।
শুধু গায়িকা নন সমাজসেবীও বটে রিহানা। মানুষের দুঃখ-কষ্ট একেবারেই সহ্য হয় না তার। তাই নিজের আয়ে অসহায় শিশুদের সাহায্যার্থে গড়ে তুলেছেন ‘বিলিভ ফাউন্ডেশন’। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যপীড়িত ও অসুস্থ শিশুদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে সংগঠনটি। এ ব্যাপারে তার ভাষ্য, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন টেলিভিশনের পর্দায় শিশুদের অসহনীয় কষ্ট দেখতাম আর বলতাম, আমি বড় হলে এই শিশুদের সাহায্যে কিছু একটা করব। এর বাইরে তিনি অসংখ্য চ্যারিটি কনসার্টে অংশ নিয়েছেন। এমনকি হাইতিতে ঘটে যাওয়া শতাব্দীর ভয়াবহ ভূমিকম্পে তিগ্রস্ত শিশুদের জন্য তহবিল গড়েছেন।
স্বল্প সময়ে রিহানা সাফল্যের অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন । ২০০৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য ১২৭ বার মনোনীত হয়েছিলেন এবং ৭৩ টি পুরস্কার তার ঘরে উঠে আসে। এরমধ্যে ওয়ার্ল্ড মিউজিক এওয়ার্ড, টিন চয়েস এওয়ার্ড উলেখ্যযোগ্য। তাছাড়া মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গেও তিনি করেছেন স্টেজ শো। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রিহানার সাফল্য তাকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায় তা হয়তো তিনি নিজেই জানেন না। কারণ এখন আর জানার নয়, এখন তার দেখার পালা।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৫৫, আগস্ট ২২, ২০১০