ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

সালমান শাহের শূন্যতা!

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১০

আমাদের চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ুর সেরা নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর ১৪ বছর হয়ে গেছে তার। কিন্তু ঢালিউডে আজও রয়ে গেছে তার শূন্যতা ।

জনপ্রিয়তায় আজও তার ধারে কাছেও পৌছাঁতে পারেন নি এই সময়ের কোনো হিরো।

৯০ দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যখন একধরণের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল, তখনই ঢালিউড আলেকিত করে সালমান শাহ আসেন এবং দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে  ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয়। আজকের নায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বেঁধে নতুন করে তিনি আশার পথ দেখান চলচ্চিত্র নির্মাতা-প্রযোজককে। পরে তাদের সেই জুটি ভেঙে গেলেও সালমান শাহের জনপ্রিয়তা ম্লান হয় নি মোটেও। বরং তার পাশে এসে জ্বলে ওঠেছেন একাধিক নবীন নায়িকা। আজকের সুপারস্টার শাবনূর তাদের একজন। সেই সময়টাতে এ দেশের দর্শকদের আবারো সিনেমা হল মুখি করে তুলতে সালমান শাহের অবদান স্বীকার না করলেই নয়।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে সালমান শাহ যে উচ্চতায় পৌছে গিয়েছিলেন তা  আগামীতে ঢালিউডে কেউ স্পর্শ করতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে অনেকেই এখনো সন্দিহান। প্রথম ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও পরবর্তীতে শাবনূরের সঙ্গে জুটি গড়ে একের পর এক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছেন সালমান। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি মুক্তির পর ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার সময় পর্যন্ত তিনি ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন। সবচেয়ে অভাবনীয় বিষয় ছিল তার প্রতিটি ছবিই ছিল ব্যবসায়িক ভাবে সুপারহিট। বাংলাদেশের আর কোনো নায়ককেরই দর্শক এতোটা আপন করে কাছে টেনে নেয় নি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সর্বকালের আলোচিত নায়ক যদি কাউকে বলতেই হয়, তিনি অকাল প্রয়াত সালমান শাহ। ঢালিউডের এই স্মাট-সুদর্শন নায়কের আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমরউদ্দি চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমানই বড়। নানাবাড়ি সিলেটে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং ও অভিনয়ের প্রতি তার দুর্বলতা। চলচ্চিত্রে আসার আগে মডেলিং করেছেন এবং ছোটপর্দার একাধিক নাটকে অভিনয়ও করেছেন। তাকে সালমান শাহ নামে চলচ্চিত্রে নিয়ে সোহানুর রহমান সোহান। অতি অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান সালমান এবং জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেই মাত্র ২৭ বছর বয়সে চিরতরে পৃথিবী ছাড়েন।

কোমল ও আবেগী মনের সালমান শাহর জীবনটাকে জড়িয়ে ছিল এক অজানা অভিমান আর দু:খবোধ, সেই বেদনা নিয়েই স্বেচ্ছায় বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। যদিও তার মৃত্য সহজভাবে মেনে নিতে সাধারণ দর্শক সহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই। সালমান শাহ’র অকাল আত্মহননের রহস্য এখনো কুয়াশার চাদরে ঢাকা রয়েই গেছে। তার মৃত্য নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও সালমান শাহের অকালে চলে যাওয়া যে ঢালিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে,  এ বিষয়ে কারো কোনরকম দ্বিমত নেই।

সালমান শাহ অভিনীত ছবি
কেয়ামত থেকে কেয়ামত (মুক্তি : ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ)
তুমি আমার (মুক্তি : ১৯৯৪ সালের ২২ মে)
অন্তরে অন্তরে (মুক্তি : ১৯৯৪ সালের ১০ জুন)
রঙিন সুজন সখী (মুক্তি : ১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট)
বিক্ষোভ (মুক্তি : ১৯৯৪ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর)
স্নেহ (মুক্তি : ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর)
প্রেমশক্তি (মুক্তি :  ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর)
কন্যাদান (মুক্তি : ১৯৯৫ সালের ০৩ মার্চ)
দেনমোহর (মুক্তি : ১৯৯৫ সালের ০৩ মার্চ)
স্বপ্নের ঠিকানা ( মুক্তি : ১৯৯৫ সালের ১১ মে)
আঞ্জুমান (মুক্তি : ১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট)
মহামিলন (মুক্তি : ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর)
আশা ভালোবাসা (মুক্তি : ১৯৯৫ সালের ০১ ডিসেম্বর)
বিচার (মুক্তি : ১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি)
এই ঘর এই সংসার (মুক্তি : ১৯৯৬ সালের ০৫ এপ্রিল)
প্রিয়জন (মুক্তি : ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন)
তোমাকে চাই  (মুক্তি : ১৯৯৬ সালের ২১ জুন)
স্বপ্নের পৃথিবী (মুক্তি : ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই)
জীবন সংসার (মুক্তি : ১৯৯৬ সালে ১৮ অক্টোবর)
মায়ের অধিকার (মুক্তি : ১৯৯৬  সালের ০৬ ডিসেম্বর)
প্রেম পিয়াসী (মুক্তি: ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল)
স্বপ্লের নায়ক (মুক্তি : ১৯৯৭ সালের ০৪ জুলাই)
শুধু তুমি (মুক্তি : ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই)
আনন্দ অশ্রু (মুক্তি : ১৯৯৭ সালের ০১ আগস্ট)
বুকের ভেতর আগুন (মুক্তি : ১৯৯৭ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর)

সালমান শাহ সমগ্র
জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭০
বাবা: কমরউদ্দিন চৌধুরী
মা   : নীলা চৌধুরী
স্ত্রী  : সামিরা
আসল নাম : শাহরিয়ার চৌধুরী  ইমন
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ চলচ্চিত্র  : বুকের ভিতর আগুন
প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি : ২৭টি
বিজ্ঞাপন : কোকাকোলা, ফানটা, জাগুয়া কেডস, মিল্ক ভিটা, গোল্ড স্টার টি।
একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফিরে, সৈকতে সারস, স্কপ্নের পৃথিবী।
ধারাবাহিত নাটক : পাথর সময়, ইতি কথা
মৃত্য : ০৬  সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২৩১০, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।