বলিউড ফিল্মডোমে কিছুদিন ধরে যেন সিক্যুয়াল ছবির ধুম পড়েছে। একের পর এক সিক্যুয়াল ছবি নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খ্যাত-অখ্যাত পরিচালকরা।
পরিচালকদের অবশ্য দোষ নেই, দর্শকদের চাহিদাতেই তারা তৈরি করছেন এসব সিক্যুয়াল। তাছাড়া অন্য ছবির চেয়ে সিক্যুয়াল ছবি সাফল্য পাচ্ছে বেশি। যেমন : কৃশ, মুন্না ভাই, ধুম, গোলমাল, রেস প্রভৃতি ছবি দর্শকরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন।
‘কোই মিল গ্যায়া’ ছবির সাফল্যের পর নির্মিত হয় এর সিক্যুয়াল ‘কৃশ’। এ ছবিটিও ব্যবসাসফল হয়। এই সাফল্যের কারণে এবার নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘কৃশ টু’। কিছুটা স্পাইডারম্যানের আদলেই নির্মিত হবে এবারের ‘কৃশ টু’। নির্মাতা রাকেশ রোশানও এই সিক্যুয়ালের পান্ডুলিপির কাজ গুছিয়ে এনেছেন। ‘কৃশ টু’-তে আগের দুটি ছবির মতোই যথারীতি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করবেন ঋত্বিক রোশন। তার বিপরীতে এবার দীপিকা পাড়ুকোন, নয়তো ক্যাটরিনা কাইফকে দেখা যেতে পারে।
এদিকে বিধু বিনোদ চোপরার প্রযোজনায় ও রাজকুমার হিরানীর পরিচালনায় মুন্নাভাই সিরিজের দুই হিট ছবি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ এবং ‘লাগে রাহো মুন্নাভাই’-এর সাফল্যের পর এবার ‘মুন্নাভাই চালে আমেরিকা’ সিক্যুয়ালটির কাজ শুরু হয়েছে। আগের পারফর্মাররাই থাকছেন এই সিক্যুয়েলে।
আব্বাস-মাস্তান পরিচালিত ছবি ‘রেস’-এর ব্যাপক সাফল্যের পর ‘রেস-২’ ছবিতে সাইফ আলী খান এবং অনিল কাপুর ছাড়াও চমক হিসেবে রয়েছেন জন আব্রাহাম। তবে এবার ক্যাটরিনা কাইফ ও বিপাশা বসুর বদলে প্রিয়াঙ্কা ও কারিনা থাকছেন। ছবিটি আগামী বছরের প্রথম দিকে মুক্তি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিং শাহরুখের ‘ডন’ হিট হবার পর এবার ‘ডন ২’-এর কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পরিচালক রোহিতের কমেডি ছবি ‘গোলমাল’ ও ‘গোলমাল রিটার্নস’-এর পর আগামী নভেম্বরে মুক্তি পাবে ‘গোলমাল-৩’। ধারণা করা হচ্ছে এ ছবি আগের সিক্যুয়ালগুলোর সাফল্যও ছাড়িয়ে যাবে। সিক্যুয়েল তৈরি হচ্ছে বাম্পারহিট ছবি ‘থ্রি ইডিয়টস’-এরও।
এছাড়া মোটরবাইক অ্যাকশন ‘ধুম’ ছবির প্রথম পর্ব হিট হওয়ার পর তৈরি হয় ‘ধুম-২’। এরই ধারাবাহিকতায় আসছে ‘ধুম-৩’। শোনা যাচ্ছে, ছবিতে খল চরিত্রে আমির খানকে দেখা যাবে। তাছাড়া অয় কুমারের ‘হেরা ফেরি’ (ফের হেরা ফিরি, হেরা ফেরি-৪) ছবির সিক্যুয়াল এবং ‘সিং ইজ কিং’ ছবির সিক্যুয়ালও তৈরি হচ্ছে।
অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে নেই সালমান খানও। তার অভিনীত অ্যাকশন ছবি ‘ওয়ান্টেড’ বক্স অফিসে হিট হওয়ার পরে ছবিটির প্রযোজক বনি কাপুর এর সিক্যুয়াল ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। সিক্যুয়াল নিয়ে এখানেই থেমে নেই প্রযোজক কাপুর। এমনকি ২০০৫ সালে সালমান অভিনীত হিট ছবি ‘নো এন্ট্রি’ নিয়েও নাকি আরেকটি সিক্যুয়াল বানানোর চিন্তা আছে তার মাথায়। এর সম্ভাব্য নাম ‘বি পজিটিভ : নো এন্ট্রি পার্ট- টু’। সিক্যুয়ালটিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করবেন সালমান খান, অনিল কাপুর এবং ফারদিন খান। তাছাড়া ‘পার্টনার-টু’ এবং নব্বই দশকের ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ ছবির সিক্যুয়ালেও সালমান অভিনয় করছেন। শ্রীদেবীর স্বামী প্রযোজক বনি কাপুর সালমানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘ওয়ান্টেড ছবি ছিল ৪৪ বছর বয়সী এই অভিনেতার একক কৃতিত্ব। এটা ছিল তার এক ধরনের ওয়ান-ম্যান-শো। একমাত্র তার কারণেই সম্ভব হয়েছে ছবির এই অস্বাভাবিক সাফল্য’। প্রথম সপ্তাহেই ‘ওয়ান্টেড’ ছবি নিট লাভ করেছিল ৪০ কোটি রুপি। সুতরাং বলা যায় ব্যবসায়িক লাভের জন্য প্রযোজকের মাথায় সিক্যুয়াল বানানোর চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক।
হলিউডে সিক্যুয়াল ছবি নির্মাণের ধারা বহু পুরনো হলেও বলিউডে এটি খুব বেশি পুরনো নয়। বলিউডে সিক্যুয়াল ছবির যাত্রা শুরু ১৯৮৯ সালে ‘নাগিন’ ছবির মাধ্যমে। বলিউডের একসময়ের হার্টথ্রুব নায়িকা শ্রীদেবী অভিনীত এ ছবিটি ১৯৮৬ সালের ‘নাগিনা’ ছবির সিক্যুয়াল। শোনা যাচ্ছে, শ্রীদেবী অভিনীত ইন্ডাস্ট্রি কাঁপানো ছবি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’রও সিক্যুয়াল তৈরি হচ্ছে শিগগিরই। এ সিক্যুয়ালও যথারীতি রয়েছেন অনিল কাপুর ।
যেভাবে বলিউডে সিক্যুয়েল ছবি নির্মাণের ধামাকা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামীতে আরও বহু জনপ্রিয় ছবি সিক্যুয়েল আমরা দেখতে পাব। এই ধারাবাহিকতায় হয়তো ভবিষ্যতে বলিউডে দেখা যেতে পারে ‘জেমসবন্ড’-এর মতো সিরিজও। বলিউডের বর্তমান গতিপথ তাই বলে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬১০, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১০