রান্না-বান্নার বিষয়টি রান্না ঘরের চার দেয়ালের বাইরে এনে শিল্পের মর্যাদা দিতে দেশে যে ক’জন মানুষ ভূমিকা রেখেছেন, গুনী রন্ধনশিল্পী ও বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীর তাদের অন্যতম। টেলিভিশনে রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজে যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, তেমনি আমাদের দেশে জনপ্রিয় করেছেন এ ধরনের অনুষ্ঠান।
তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। চলে গেছেন এক না ফেরার দেশে। পুষ্টি ও রান্না শিল্পের উৎকর্ষের পেছনে তার অবদানের কথা আমরা ভুলতে পারব না কোনোদিন। তাকে শ্রদ্ধা জানাই এবং তার শান্তি কামনা করি।
প্রফেসর সিদ্দিকা কবীর ১৯৩১ সালের ৭ মে পুরান ঢাকার মকিম বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৌলভি আহমেদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ও পরবর্তী সময়ে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। তার মা সৈয়দা হাসিনা খাতুন ছিলেন গৃহিনী।
স্নাতক পাসের পর তিনি প্রথমে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এবং পরে ইডেন কলেজে শিক্ষকতা করেন। এর আগে ছাত্রী অবস্থায় তিনি রেডিওতে কাজ করতেন।
পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৬৩ সালে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। দেশে ফিরে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে যোগ দেন।
১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ব্যাংকার সৈয়দ আলী কবীরকে বিয়ে করেন।
শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসরে যান ১৯৯৩ সালে।
সিদ্দিকা কবীর টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করেন ১৯৬৫ সালে। তখনকার পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরে বাইরে’ নামে একটি রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন তিনি।
একটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত ‘সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি আমাদের দেশ-বিদেশের রান্নার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। বিশ্বের লাখ লাখ বাঙালি নারী পুরুষকে তিনি শিখিয়েছেন নানা পদের রান্না।
নতুন রাধুনী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ রান্নার ক্ষেত্রে সিদ্দিকা কবীরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছে। কেউ শিখেছে তার বই পড়ে, কেউ টিভিতে দেখে।
সিদ্দিকা কবীর তার ‘রান্না খাদ্য পুষ্টি’ বইটির জন্য ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলাদেশের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইগুলির মধ্যে এখন পর্যন্ত বইটি অন্যতম।
এছাড়া তিনি ডানো, নেসলে ও রাঁধুনীর পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন।