‘এক,দুই সাড়ে তিন রাত পোহালেই ঈদের দিন’ এই কথা বলে বাড়ি মাতায় না এমন ছোট্ট সোনামনি বিরল।
তাইতো সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে ঈদের সব আনন্দ পরিবারের ছোট্ট শিশুদের ঘিরে।
বাজার ঘুরে শিশুদের পোশাক: ঈদের খুশি শিশুদেরই বেশি থাকে। ঈদের পোশাক ঘিরে তাদের যত জল্পনা-কল্পনা। বড়দের পোশাক কেনা হোক বা না হোক, ছোটদের পোশাক কেনা চাই। অভিভাবকও সবচেয়ে আকর্ষণীয় সুন্দর পোশাকটি কিনে দিতে চান সন্তানকে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন রঙ ও নকশায় অলংকৃত করা হয়েছে শিশুদের পোশাক। পোশাক তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদে বাজারে আনেন নতুন ডিজাইনের জামা। আর দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও বড়দের পাশাপাশি হাল ফ্যাশনের পোশাক এনেছে ছোট্ট শিশুদের জন্য।
অঞ্জনস, ওটু, আড়ং, রঙ, দেশাল, চাঁদের হাসি, অন্যমেলা, নগরদোলা, সাদাকালো, নিত্য উপহার ইত্যাদি প্রায় সব ফ্যাশন হাউসই তাদের নিজেদের ডিজাইন মেলে ধরেছেন ঈদকে সামনে রেখে। ঈদে শিশুদের পোশাক নিয়ে জানতে চাইলে দেশীয় ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, বড়দের ন্যায় ছোটদের পোশাকেও রঙে রঙিন হয়ে আছে রঙ। ফতুয়া, পাজ্ঞাবি, টুপি, ফ্রকসহ সবধরনের পোশাকই করেছি আমরা। পোশাকের কাজ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুদের কথা মাথায় রেখে আরা যতোটা সম্ভব পোশাককে রঙিন করার চেষ্টা করেছি।
পোশাকগুলোতে ব্লক, টাইডাই,অ্যামব্রয়ডারি ও মিক্স ফিউশনধর্মী কাজ করা হয়েছে। আর আরামের কথা ভেবে সুতি,সিল্ক ও ধুপীয়ান কাপরে এই কাজগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পোশাকের রঙের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষাকে মাথায় রেখে নীল ও নীলের বিভিন্ন শেডকে নিয়ে কাজ করেছি।
শিশুদের পোশাকের ব্যাপক সংগ্রহ রয়েছে নগরদোলায়। ঈদে শিশুদের পোশাকের বিভিন্ন দিক নিয়ে জানতে চাইলে দেশীয় ফ্যাশন হাউস নগরদোলার ম্যানেজার জাওয়াদ আরিফ বলেন, বরাবরের মতো এবারও নগরদোলা নিত্যনতুন ডিজাইনের বেশকিছু শিশুদের পোশাক এনেছে। পাজ্ঞাবি, ফতুয়া থ্রি-পিস সহ সব ধরনের পোশাকে থাকছে দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া। স্কিন প্রিন্ট, ব্লক, হালকা কারচুপি,মেশিন অ্যামব্রয়ডারিতে উৎসবে রঙে সাজানো হয়েছে শিশুদের পোশাক। আর দুই থেকে বার বছর বয়সের শিশুদের পোশাকের মধ্যে নগরদোলার রেডি শাড়িতো থাকছেই নতুন আঙ্গিকে।
এছাড়াও দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সাজানো হয়েছে শিশুদের রঙবেরঙের পোশাক দিয়ে। ঈদ সামনে রেখে আড়ং মেয়েশিশুদের জন্য এনেছে ফ্রিল দেওয়া পার্টি ফ্রক, হাতের জমকালো কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, ঘাঘড়া চোলি। সালোয়ার ও প্যান্টের কাজে নকশা এবং কাটে দেখা গেছে বৈচিত্র্য। ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবিতে কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ডি, সিল্ক, মসলিন ও খাদি। উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন রকম হাতের কাজ দিয়ে। যাত্রায় শিশুদের পোশাকের কাটিংয়ে নান্দনিক নকশা করা হয়েছে। এখানে অ্যান্ডি, সুতির কাপড় প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া ভিন্নতা আনতে মেয়েদের পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে বেল্ট আর ছেলেদের পোশাকের মধ্যে আছে ফতুয়া, শার্ট ও পাঞ্জাবি।
এছাড়া দেশাল, বাংলার মেলা, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, গার্লস ক্লোজেট, নন্দন, নিপুণ, নিউমার্কেট, গাউছিয়াসহ ছোট-বড় সব ফ্যাশন হাউসে শিশুদের নান্দনিক পোশাক পাওয়া যাবে।
শিশুরা যেহেতু আতিমাত্রায় সংবেদনশীল তাই এমন পোশাক পরিধান করাবেন না যেটা শিশুর অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়।
মেয়েদের আনারকলি, একটু ঘের দেওয়া লম্বা কামিজ যেমন চলবে, তেমনি ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবিতে এ লাইন কাটের ব্যবহার বেশি এবার। আর শিশুরা সারা দিন জমকালো পোশাক পরে থাকতে পারে না। সে জন্য সুতি, ডেনিম বা জিনসের প্যান্ট, খাটো হাতার শার্ট, ফতুয়া, টপস অনায়াসে পরতে পারে ।
মেয়েশিশুদের জন্য পার্টি ফ্রক, ঘাগড়া চোলি, টিউনিক ক্র্যাপ্রি ও লেগিংস চলছে। পাশাপাশি সালোয়ার কামিজও পরতে পারে এবারের ঈদে। কাতান, টিস্যু, মসলিন ও সার্টিনের ব্যবহার ভালো লাগবে পার্টি পোশাকে। এ ছাড়া সুতির কাপড় তো রয়েছেই। নকশায় প্রাধান্য পাবে কারচুপি, এমব্রয়ডারিসহ হাতের কাজ। এছাড়াও রয়েছে সিল্ক, ধুপিয়ান, মসলিন কাপড়ের পার্টি পোশাক। আর রঙ হিসেবে শিশুদের জন্য বরাবরের মতো বেছে নেওয়া হয়েছে উজ্জ্বল রঙ।
দরদাম: ফ্যাশন হাউসগুলোতে কাজ অনুসারে পাঞ্জাবিগুলোর দাম পরবে ৫৫০ টাকা থেকে ৩০০০টাকা, টি-শার্টগুলো ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ফতুয়াগুলো পাবেন ২৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, মেয়ে শিশুদের স্যালোয়ার কামিজ পাবেন ৮৫০ টাকা থেকে ৭০০০টাকার মধ্যে, ফ্রকগুলো পাওয়া যাবে ৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০টাকার মধ্যে। আর বিভিন্ন শপিংমলগুলো নান্দনিক নামের জামাগুলো পাবেন ১২০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকার মধ্যে। মাকের্টে ভিড় বাড়ার আগেই আপনার সোনামনিকে নিয়ে গিয়ে তার পছন্দেও পোশাকটি কিনে দিন।
ছবি: নগরদোলার সৌজন্যে