দেখতে না দেখতেই শেষ হয়ে যায় মাতৃত্বকালীন ছুটি। এরপর সদ্য মা হওয়া মানুষটির মধ্যে দেখা দেয় অফিস এবং সন্তানকে সামলানোর নানা চিন্তা।
কিন্তু এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই। একজন কর্মজীবী মাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে একটি সঠিক পরিকল্পনা এ সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারে। আর এ পরিকল্পনা তৈরির জন্য কিছু নির্দেশনা :
কর্মক্ষেত্রে ফেরার আগে
মাতৃত্বকালীন ছুটি চলাকালেই কাজে ফেরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
ঝেড়ে ফেলুন সব দ্বিধা: এত ছোট বাচ্চাকে রেখে কাজে যাব? বাচ্চার কোনও সমস্যা হবে না তো? মানুষ কী বলবে? একজন সদ্য মা সন্তানকে রেখে কর্মক্ষেত্রে ফেরার আগে এরকম নানা আবেগীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন। কিন্তু সন্তানকে রেখে কাজে গেলেই কেউ ‘খারাপ মা’ হয়ে যান না। সব সময় মনে রাখতে হবে, একজন মা তা-ই করেন যা তার পরিবার এবং নিজের জন্য মঙ্গলজনক।
শিশুর তত্ত্বাবধানের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম খুঁজে বের করুন: আপনার শিশু জন্মের আগেই এমন একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ঠিক করে রাখুন, যে বা যারা আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সন্তানকে দেখবে। এটি হতে পারে কোনো ডে-কেয়ার সেন্টার, কোনো নিকটজন, সহকর্মী। তবে যেটিই করুন না কেন পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন। এতে আপনি অনেকটা চাপমুক্ত থাকবেন, সেই সাথে নিরাপদে থাকবে আপনার শিশু।
কথা বলুন বসের সঙ্গে : মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর অফিস আপনার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করবে বসের সাথে কথা বলে তা জেনে রাখুন। আপনার সুবিধাজনক কাজের সময় নিয়েও কথা বলুন। এতে ছুটি-পরবর্তী কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকবে না। এছাড়া কাজে যোগদানের কমপক্ষে দু সপ্তাহ আগেই বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময় অফিসের সময়ের সাথে ঠিক করে নিন।
কাজে যোগ দেওয়ার সময় ঠিক করে রাখুন : ছুটি শেষ হওয়ার আগেই কাজে যোগ দেওয়ার একটি দিন ঠিক করে অফিসে জানিয়ে রাখুন। এতে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো হয় সপ্তাহের শেষের দিকে কাজ শুরু করা। এতে কাজে ফেরার প্রথম সপ্তাহটি দ্রুত শেষ হবে। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার আরও একটু সময় পাবেন।
যখন আপনি কাজে ফিরবেন
মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ করে কাজে যোগ দেওয়ার পর ঘরে-বাইরে আপনার চারপাশে থাকবে রাজ্যের কাজ। ছোট থেকে বড় সবার চাহিদা রক্ষা করতে হলে আপনাকে হতে হবে কৌশলী। এ কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে নিচের পরামর্শগুলো :
নিজেকে গুছিয়ে নিন : কোনও কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পরিকল্পনা বা রুটিনের বিকল্প নেই। তাই প্রতিদিনের কাজের একটি রুটিন তৈরি করুন। ঘর এবং অফিসের কাজ আলাদা করে ফেলুন। আলাদা করুন নিজেকে, সন্তানকে এবং স্বামীকে দেওয়ার সময়। বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো চিহ্নিত করে অপ্রয়োজনীয় কাজ রুটিন এবং মন থেকে মুছে ফেলুন। আপনার ঘর ও অফিসের কাজের সমন্বয়ের জন্য স্বামীর পরামর্শ এবং সহায়তা নিন।
সন্তানের কাছাকাছি থাকুন : কর্মজীবী মায়ের পক্ষে সন্তানের কাছে থাকা সবসময় সম্ভব হয় না। কিন্তু চেষ্টা তো করা যায়। কাজে থাকার সময় তত্ত্বাবধানকারীর থেকে ফোনের মাধ্যমে সন্তানের খোঁজ রাখুন। সন্তানের প্রিয় কোনো ছবি আপনার অফিস ডেস্কে রাখতে পারেন। কাজ থেকে ফেরার পর সন্তানের কাছেই থাকুন। সবচেয়ে ভালো হয় কাজ শেষে স্বামী-সন্তানকে একসাথে সময় দিলে।
বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন : সমস্যা কখনো বলে আসে না। এজন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। আপনার কাজের দিনে সন্তান অসুস্থ হতে পারে অথবা আপনার পরিচারিকাও অসুস্থ হতে পারে। এজন্য অফিসে এমন একজন সহকর্মীকে ঠিক করে রাখুন যিনি আপনার হয়ে অফিসের কাজ করে দেবেন। সুসম্পর্ক রাখুন পরিবারের সঙ্গে। অথবা কোনো আত্মীয় বা বন্ধুকেও বলে রাখতে পারেন শিশুকে দেখাশোনার জন্য।
শিশুকে নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করান : শিশুর সঠিক বেড়ে উঠার জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। এছাড়া নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে। তাই অফিসে যদি ডে-কেয়ার না থাকে তাহলে ব্যাগ বা বোতলে দুধ সংরক্ষণ করে বাসায় রাখুন।
অন্যের সহায়তা নিন : স্বামীকে সাহায্য করা, বন্ধু-মা-বাবাকে ভালোবাসা এই কাজগুলো বাদে বাকি অন্য সব কাজ নিজে করার চেষ্টা করবেন না। আপনার ভালোলাগা, খারাপলাগা, হতাশাগুলো শেয়ার করুন পরিবারের সাথে। সন্তানকে প্রতিপালন অথবা ব্রেস্ট ফিডিংয়ে সমস্যা হলে পরিবার বা প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এগুলো ছাড়াও নিজের মধ্যে সবসময় ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। দিনের শেষে ঘরে ফিরে সন্তানকে বোঝান তার জন্য আপনি কতটা উদগ্রীব থাকেন। হয়তো ছোট বলে সে কথা বুঝবে না কিন্তু আপনার ভালোবাসা তো অনুভব করবে!