অথৈ প্রায়ই বন্ধুদের কাছে কোনো সুন্দর জিনিস দেখলে কাউকে না জানিয়ে সেটা নিয়ে আসে। তেমন বড় কিছু নয়, কারও কলম, রং-তুলি, লিপস্টিক বা মাথার ক্লিপ।
কোথাও বেড়াতে গেলে দেখা যায় ছোট কোনো শোপিস তার ব্যাগে পাওয়া যায়। বাবা-মা মেয়ের এই বিষয়টি জানার পর থেকেই বেশ বিব্রত। বিশেষ করে কোথাও যাওয়ার পর সারাক্ষণই মেয়েকে চোখে চোখে রাখেন। প্রথম দিকে কাউকে না বলে কিছু নিয়ে এলে মা খুব বকা দিতেন। পরে বুঝিয়ে তাকে ফেরৎ দিয়ে পাঠাতেন। কিন্তু দিন দিন অথৈয়ের এই সমস্যা বেড়েই চলেছে।
বাবা –মা তাকে বুঝিয়েছেন যা পছন্দ হবে তাদের জানাতে তাহলে ওরাই কিনে দেবে। তাও এই না বলে অন্যের জিনিস নিতেই তার ভাল লাগে। ধরা পড়ার ভয় যে করে না তা নয়, তাও হাত নিশপিশ করে পাশে কোনো জিনিস পড়ে থাকতে দেখলে। মা ভাবে এটা মেয়ের কী বদ অভ্যেসে পরিণত হচ্ছে? জানাজানি হলে তো খুব বেইজ্জতি আছে কপালে!
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। যে জিনিস নিজের নেই অথবা নিজের থাকার পরও আরো বেশি করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই লোভ। লোভী ব্যক্তি কোনো ন্যায়-অন্যায় চিন্তা করে না। অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ কার না হয়, কিন্তু সেটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলেই বিপদ।
অথৈয়ের অভ্যেসটাকে ঠিক চুরি বলা যায় না। বরং ওর সমস্যাটা অনেকটা মানসিক রোগ(ডিসঅর্ডার)। একে ক্লেপটামেনিয়া বলে, যার অর্থ হল না বলে অন্যের জিনিস নিয়ে নেওয়া।
এই প্রবণতা এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে কিন্তু ভবিষ্যতে খুব বিপদে পড়তে হবে। কারণ এই রোগ এক সময় অভ্যেসে পরিণত হবে। আর অন্যের বড় জিনিসগুলোও সে নিতে চাইবে এই অবৈধ উপায়ে, কাউকে না বলে।
তা হলে উপায়?
সন্তানকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করতে, প্রথমেই পরিবারের বাবা-মাকে একটি সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের ভুল হলে অবহেলার চোখে দেখি, মনে করি বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, আবার অনেকেই অন্যের সামনে শিশুকে ছোট করে কথা বলেন, বারবার তার ভুলের জন্য শাস্তি দেন, লজ্জা দেন। এর কোনোটাই আসলে সঠিক প্যারেন্টিং-এর মধ্যে পরে না।
শিশুর মধ্যে এই সমস্যা দেখা গেলে তা নিয়ে ওকে বকাঝকা না করে বুঝিয়ে বলতে হবে অন্যের জিনিস, না বলে নেয়াটা অপরাধ, এটা করলে তাকে কেউ বিশ্বাস করবে না।
শিশুর চাওয়া তার পছন্দগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে, শিশু কিছু চাইলে অনেক বাবা মা তারচেয়েও ভালো জিনিস কিনে দেন। কিন্তু ওর হয়তো ওটাই পছন্দ, সে ওটা বাবা-মায়ের কাছ থেকে না পেয়ে অন্যেরটাই নিয়ে আসে।
আর নিয়মিত এমন হতে থাকলে শিশুটি তার পছন্দগুলো বাবা-মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে না, সরাসরি অন্যেরটা লুকিয়ে নিয়ে আসে।
খুব ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে শিশুটি প্রায়ই এমন করছে কি না। যদি এই সমস্যা নিয়মিত হতে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্লেপটোমেনিয়া ধরা গেলে শুধুমাত্র কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমেই এটা সারানো সম্ভব।
আমরা শুধু ছোটদের কথা বলছি, তবে এই সমস্যা কিন্তু অনেক বড় মানুষের মধ্যেও রয়েছে। তাই সময় থাকতে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতি মুহুর্তে সুন্দরভাবে বেচেঁ থাকার শক্তি অর্জন করতে হবে আমাদের।
আরও অনেক বিষয়ে জানতে https://www.facebook.com/bnlifestyle