প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন উত্তরা গণভবনকে ঘিরে আগ্রহী মানুষ ভীড় জমান। প্রতিদিন বহু নারী পুরুষ আসেন এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে।
চারিদিকে সুউচ্চ প্রাচীর। প্রাচীরের কোল ঘেসে ভিতরে ও বাহিরে গভীর প্রশস্ত পরিখা। দ্বিতল সুউচ্চ প্রবেশ পথের ওপর বিশাল মিনার। মিনারের চূড়ায় একটি বৃহৎ দেয়াল ঘড়ি যা আজও সঠিক সময় দেয়। প্রতি ঘন্টায় ঘড়ির আওয়াজ বহু দুর থেকে শোনা যায়। প্রবেশ পথের দুই পাড়ে একাধিক কামান। ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়ে দোল মঞ্চ, পারিজাত’ কেয়া, কামিনি, হৈমন্তিকাসহ দেশি বিদেশি নানজাতে ফুল আর হরেক রকমের ফলজ ও বনজ বৃক্ষরাজি। সাজানো গোছানো রাজবাড়ির একটু এগুতেই চোখে পড়ে কুমার ভবন, কৃত্রিম রাবার গাছ, ঝরনা আর শ্বেত পাথরে নারী মূর্তি। আছে কর্পুর গাছ। আরও আছে তিনশ’ বছর আগের কাঠের তৈরি দামী আসবাবপত্র, ঝাড়বাতি, ফুলদানি, বিশাল হলরুম আরও কতকি, যেগুলি এখনও নষ্ট হয়নি। চোখে না দেখে যেন, মন ভরে না।
দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারাম রায় ১৭৩৪ সালে শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে এই রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন। রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদা নাথ রায়ের রাজত্বকালে ১৮৯৭ সালের ১২ জুন প্রায় ১৮ মিনিট ব্যাপী এক প্রলয়ংকরি ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় ১১ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রশিল্পী আর দেশি নির্মাণশ্রমিকের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর ১৯০৮ সাল এই রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন। ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর রাজ পরিবারের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করেন। ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তৎকালীন গর্ভনর মোনায়েম খান এটিকে গর্ভনর হাউসে রুপান্তরিত করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৯ ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা দেন।
তবে, এখানে এলেই আপনি রাজবাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না। ভেতরে দেখতে হলে আপনাকে আগেই স্থানীয় প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।
দর্শনার্থিদের জন্য উত্তরা গনভবন খুলে দেওয়ার দাবী দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারের নাটোরের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, রাজধানীর বাইরে রাষ্ট্রপতির একমাত্র বাসভবন উত্তরা গণভবন, সাধারন জনগণের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে, কর্তৃপক্ষ খুব তারাতারি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দর্শনীর বিনিময়ে উত্তরা গনভবন খুলে দেওয়া হলে এখান থেকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব পেতে পারে। পাশাপাশি এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে ঘিরে এলাকার উন্নয়ন ঘটতে পারে।
ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে আপনি নাটোর যেতে পারেন। দুই পথেই আপনার ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে চাইলে নিজের অথবা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।