এক্ষেত্রে শিরোনামের দ্বিতীয় অংশটির প্রেক্ষাপট বলে নেওয়া ভালো। দেশীয় হস্তশিল্পের বিকাশ ও প্রসারে একটি ‘মিনি জামদানি মেলা’র আয়োজন করে দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে জামদানিপ্রেমীদের জন্য বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মিডিয়া হাউজের কনফারেন্স রুমে এ মেলা বসে।
এতে খাঁটি সুতোয় বোনা রঙ-বেরঙের নজরকাড়া সব জামদানি শাড়ি নিয়ে হাজির ছিলেন নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত জামদানি পল্লীর কারবারিরা। সাশ্রয়ী দামে বেচাকেনাও চলে।
জামদানি মেলার আগে ‘মিনি’ শব্দটি লক্ষ্যণীয়। বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন চেয়েছিলেন, মিনি অর্থাৎ ছোট আকারে করে দেখা যাক। আশানুরূপ সাড়া মিললে বড় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
উদ্দেশ্য, দেশীয় হস্তশিল্পের প্রসার ও বিকাশ কার্যক্রমকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া। সেইসঙ্গে জামদানি কারিগরদের মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাত থেকে বাঁচিয়ে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ক্রেতা-কারিগরের মেলবন্ধনও বলা যায়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করে চলেছে বাংলানিউজ। পাশাপাশি এ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের শিল্প, উদ্যোগ, কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বের সঙ্গে খবর প্রকাশ করে আসছে।
বছরব্যাপী বাংলানিউজের নানা আয়োজন, উদ্যোগ, কার্যক্রম এরই পরিচায়ক। এর মধ্যে হারাতে বসা গ্রাম-বাঙলার ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তুলে ধরতে ‘বাংলার প্রাণের কাছে’, নদীপারের জীবন যাপন তুলে ধরতে ‘উপকূল থেকে উপকূল’, নদীমাতৃক বাংলাদেশকে তুলে ধরতে ‘নদীর কূলে কূলে’, বাংলার রূপ-লাবণ্য তুলে ধরতে ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’, মুক্তিযুদ্ধের অজানা অধ্যায় তুলে ধরতে ‘রণাঙ্গনের এপার-ওপার’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বস্তুনিষ্ঠ খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে বাংলানিউজ। জনপ্রিয় এ পোর্টালের নিয়মিত পাঠকরা এ বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত। বলা বাহুল্য, এগুলো সংবাদমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জামদানি বয়নের অতুলনীয় পদ্ধতির কারণে ইউনেস্কো একে একটি ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীদের অতি পরিচিত। ঢাকাই জামদানির কদর বিশ্বজুড়ে।
কিন্তু যথাযথ পারিশ্রমিকের অভাব এবং নতুন ও দক্ষ কারিগর তৈরি না হওয়ায় দিন দিন এ ঐতিহ্যবাহী শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এর সঙ্গে রয়েছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। যে জন্য এক শ্রেণির অসাধুদের হাতে ঠকতে হয় ক্রেতা-কারিগর দু’জনকেই।
বাংলানিউজ ছোট পরিসরে এ মেলার আয়োজন করে সামাজিক দায়বদ্ধতার আরেকটু উপরের ধাপের একটি মহড়া দিয়ে ফেললো বলা যায়। মূল উদ্দেশ্য, কারিগররা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসবেন আর ক্রেতারা সরাসরি তাদের কাছ থেকে পছন্দের শাড়ি-কাপড়টি কিনবেন।
এর সুবিধা ব্যাখ্যা করলেন মেলায় অংশ নেওয়া কারিগর মো. আলামিন, যেটা হয় আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা শাড়ি-কাপড় নিয়ে যান। ধরেন, একজন ব্যবসায়ী যে শাড়িটি আমাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় নেন, দোকানে সেটি সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করবেন। এই বাড়তি টাকার ভাগ কারিগররা পান না। বাংলানিউজের এই মেলায় যেটি হয়েছে, ওই শাড়িটি একজন ক্রেতা আমাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকাতেই কিনতে পারছেন। তার দুই-তিন হাজার টাকা বেচে গেলো।
বাংলানিউজ এমন আয়োজন আরও বড় পরিসরে করলে কারিগররা উপকৃত হবেন। তারা আরও ভালো কাজ করতে আগ্রহী হবেন। ভালো পারিশ্রমিক পেলে তরুণ প্রজন্মও জামদানি বোনার কাজ শিখতে আগ্রহী হবে, যোগ করেন আলামিন।
মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, খুব ভালো লেগেছে বাংলানিউজের এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে। একটু অন্যরকম মেলা বলে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে এসেছেন। আমরাও সেটা মাথায় রেখে খুব ভালো ভালো ডিজাইনের বাছাই করা শাড়ি এনেছিলাম।
রাজধানীর গ্রিনরোড থেকে জামদানি মেলায় আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তানজিনা। মেলা ঘুরে বলেন, বাংলানিউজে জামদানি মেলার নিউজ দেখে গিয়েছিলাম। দারুণ সব কালেকশন। দোকানগুলোর তুলনায় একই কোয়ালিটির শাড়ি অনেক কম দামে পেয়েছি। এরকম মেলা বাংলানিউজ আরও আয়োজন করুক।
তানজিনার মতো রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিলেন অনেকেই। বিক্রিবাট্টাও খুব ভালো। মেলার সময় ছিলো সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। রীতিমতো ওয়ার্কিং আওয়ার। এরপরও মেলায় জামদানিপ্রেমীদের ভিড় বিস্ময়জনক — ভবিষ্যতের উদ্যোগের জন্য একটি ইঙ্গিত দিয়ে রাখলো যেনো।
মেলায় আসা বিশিষ্টজনের মধ্যে ছিলেন কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম।
মানসম্মত শাড়ি দোকানের তুলনায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে পাওয়ায় বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় তিনশো শাড়ির অর্ডার পেয়েছেন কারিগররা। যেটি ‘বিরাট পাওয়া’ এবং তার আসা স্বার্থক বলে মনে করছেন তিনি। বাংলানিউজের কাছে বার বার নানাভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বোঝা গেলো, ‘মিনি’ জামদানি মেলা আর মিনি নেই। ইতোমধ্যেই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এটি বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না, এই তিনশো শাড়ির অর্ডারে লাভবান কেবল কারিগর আলামিনরা নন, জামদানি শিল্পটির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এর ভাগিদার হবেন। দেশের হস্তশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে বাংলা নববর্ষের (১৪২৪) শুভেচ্ছা বাংলানিউজ এভাবেই দিক।
ছোটবেলায় বহুবার পড়া ভাব সম্প্রসারণের দু’টি লাইনের কথা মনে পড়ে গেলো, ‘ছোট ছোট বালু কণা বিন্দু বিন্দু জল/গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল...’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এসএনএস